রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের শাহামিরপুর গ্রামে একটি বিয়েকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গ্রামের আবুল জোয়াদ্দারের প্রবাসী ছেলে সবুজ জোয়াদ্দারের বিয়ে ঘিরে এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার তালখড়ি গ্রামের প্রবাসী ইব্রাহিম পাটোয়ারীর স্ত্রী মনিরা খাতুন প্রায় ৩-৪ মাস আগে থেকেই প্রেমিক সবুজের বাড়িতে ‘স্ত্রী’ পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। অথচ সবুজ তখনও বিদেশে অবস্থান করছিলেন।
সরেজমিনে গেলে প্রকাশ্যে আসে, চার থেকে পাঁচ বছর আগে মনিরার বিয়ে হয় প্রবাসী ইব্রাহিম পাটোয়ারীর সঙ্গে। সেই সংসারে চার বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিদেশে থাকা স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে ব্যাক ডেটের কাগজপত্র ব্যবহার করে মনিরা তার স্বামীকে তালাক দেন। পরে সবুজের অনুপস্থিতিতেই গাজীপুর আদালতের একটি নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করার হলফনামা তৈরি করেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর সবুজ বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে মনিরা তার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেন। পরদিন স্থানীয় এক হুজুরের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয় বলে জানা যায়। তবে এখনো কাবিননামা সম্পন্ন হয়নি।
এ বিষয়ে মনিরা খাতুন বলেন, “আমার আগের বিয়ে ছিল, সেখানে একটি সন্তানও আছে। স্বামী বিদেশে থাকায় সবুজের সঙ্গে ফোনে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ঢাকায় চলে আসি। তখন কোর্টের মাধ্যমে সবুজকে বিয়ে করি। প্রায় ৩-৪ মাস ধরে আমি এই বাড়িতে আছি। সবুজ দেশে ফেরার পর গ্রামের হুজুর দিয়ে আমাদের আবার বিয়ে হয়।”
তবে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, কাবিন ছাড়াই অবৈধভাবে তারা সংসার করছেন। এতে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি মনিরা তার প্রবাসী স্বামীর কষ্টার্জিত টাকা ও গহনা নিয়ে নতুন স্বামীর কাছে চলে এসেছেন বলেও দাবি স্থানীয়দের।
সবুজ জোয়াদ্দার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগান্বিত হয়ে বলেন, “আমি কিছু বলব না। মামলা-কোর্ট যা হয়, আমি দেখবোনে। আমি নাবালিকা নিয়ে সংসার করছি না। আপনাদের কাজ আপনারা করেন। এসময় মেয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগের নাম্বার চাইলে তিনি সেটা না দিয়ে নিজের খালু (ফজলু মন্ডল) এর নাম্বার প্রদান করেন।”
সবুজের বাবা আবুল জোয়াদ্দার জানান, “মেয়েটি কয়েক মাস আগে আমার বাড়িতে আসে। তখন জানতে পারি, কোর্টের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তাই আমি তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। ছেলে দেশে ফেরার পরদিনই মোল্লা দিয়ে আবার বিয়ে করাই। তবে কাবিননামা এখনো হয়নি।”
তাদের বিবাহ সংক্রান্ত যে হলফনামা তৈরি করা হয়েছে, তা ১৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সম্পন্ন হয়। কিন্তু সেদিন সবুজ জোয়াদ্দার দেশে ছিলেন না। ওই হলফনামায় শুধু মাত্র মনিরার স্বাক্ষর থাকায় বিষয়টি আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, “তালাক বৈধ হতে হলে ইউনিয়ন পরিষদে নোটিশ প্রদান ও তিন মাসের ইদ্দতকাল পার হওয়া বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে নোটারী পাবলিক কোনোভাবেই কাবিনের বিকল্প হতে পারে না। তাই এই বিয়ে আইনগতভাবে বৈধ নয়।”
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ফায়দা লুটতে মরিয়া স্থানীয় একটি মহল। তারা ওই বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি এবং চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানা গেছে।