রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর বেরিবাঁধ এলাকায় পাউবোর লিজ দেয়া ১০ একর জমির দখল ও জমি রক্ষা নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন সেখানকার ১০ একর জমি সম্প্রতি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান শামীমের নামে লিজ দেয়া হয়। শামীম সেখানে মাছের ঘের তৈরি করতে মাটি কাটার প্রস্তুতি নিলে এলাকা বাসীর প্রবল বাঁধার মুখে পড়েন।
গত শনিবার ঘটনাস্থল উপজেলার রিয়াজুদ্দিন পাড়ায় গিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭/৭৮ সালের দিকে ঐএলাকায় একটি সুইচ গেট ও একটি ইটভাটা নির্মাণের জন্য ৬ একর জমি আংশিক মূল্য পরিশোধ করে অধিগ্রহণ করে। পিরবর্তীতে সেখানে সরকার কোন ধরনের সুইসগেট ও ভাটা নির্মাণ করেনি। এমতাবস্থায় তৎকালীন সময় হতে এলাকাবাসী নিজেদের স্ব-স্ব জমি ভোগ দখল করে আসছে।
শামীম গোয়ালন্দ এলাকায় তার নিকটস্হ কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে লিজের ১০ একর জমির চতুর্দিকে লাল নিশান টানিয়ে দেয়। সেইসাথে তারা সেখানে পুকুর খননের লক্ষ্যে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করতে শুরু করেন।
এমতাবস্থায় এলাকাবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী সহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে সহযোগিতা কামনা করেন। উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা জানান, সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী শনিবার সকাল সারে ১০ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ তাকে ঘিরে ধরেন। তিনি এই জমিতে পুকুর খনন করা বা বাইরের কারো লিজ বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেন। বিষয়টি তিনি শীঘ্রই সকলকে নিয়ে বসে সমাধান করবেন বলেও জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ সরদার, গিয়াস ফকির, গোলজার ফকির, বেদেনা বেগম, ঝরনা ও ছকিনা সহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এখানে পুকুর কাটা হলে তারা গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়বে। এর মধ্যে ১০/১২ টি পরিবারের বসতবাড়ি রয়েছে। রয়েছে অনেক ফসলি জমি। তাছাড়া এখানকার বেরিবাঁধের খালে বর্ষার সময় মাছ ধরা,পাটের জাগ দেয়া,জমিতে সেচ দেয়া সহ নানা কারনে এলাকার শতশত মানুষ এর উপর নির্ভরশীল। বাইরের কেউ লিজ নিয়ে পুকুর খনন করলে তাদের চরম বেকায়দায় পড়তে হবে।
এর আগে তারা ওই জমি মৎস্যজীবি সমিতির নামে লিজ নেয়ার আবেদন করেও পাইনি বলে তারা অভিযোগ করেন।
তবে সরকার যদি এই জমি লিজ দেয়ই, তাহলে তাদেরকেই দিতে হবে।কেননা এই জমি তাদের বাপ-দাদাদের। রাজবাড়ী পাউবোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা জানান, লিজ দেওয়ার পূর্বে তাদেরকে কোন ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়নি। সম্পূর্ণ গোপনে এই কাজটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান শামীম মুঠোফোনে বলেন, পাউবো স্থানীয়দের বারবার জানালেও কেউ লিজ নিতে আগ্রহী হননি। এমতাবস্থায় তিনি সম্পূর্ণ বৈধভাবে ৫ একর জমিতে মাছ চাষ এবং অপর ৫ একর জমিতে চাষাবাদের জন্য মোট ১০ একর জমি লিজ নিয়েছেন। কোন অন্যায় করেননি। লিজের জায়গার মধ্যে যে কয়েকটি পরিবার রয়েছে তাদের সাথে আলোচনা করে তাদের বিষয়ে সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।