পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৪০ শতাংশ যানবাহন কমেছে। আরও কমার আশংকা করছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা। তবে ৪০শতাংশ যানবাহন কম আসার কারণে উভয় ঘাট থাকছে দুর্ভোগ মুক্ত। ঘাটে এসে সহজে লঞ্চ ও ফেরি পার হওয়া সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিস) আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পার হয়ে এসেছে বাস ৪৪৪, ট্রাক ১১১৭, ছোট গাড়ী ১০৯৫। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া গেছে বাস ৪৫১, ট্রাক ১১২৯ এবং ছোট গাড়ী ১১৩০। সব মিলে মোট গাড়ী ৫৩৬৬। কিন্ত ২৬ জুনের পূর্বে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের উভয় ঘাট মিলে গড়ে ৮৪০০শত বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ফেরি পারাপার হতো। সেই হিসেবে ৪০শতাংশ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন কমেছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে কর্মরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোড পারমিট না থাকায় এখনও অনেক যাত্রীবাহী বাস পদ্মা সেতু দিয়ে যেতে পারছে না। তবে রোড পারমিট পেলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা অনেক নেমে যাবে। তিনি জানান, পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করবে বেশি। কিন্ত রাজধানী ঢাকা শহরের বাইরের পণ্যবাহী ট্রাক গুলো পদ্মা সেতু দিয়ে যাবে।
চলতি মাসের ১৯ জুন থেকে সারাদেশে নৌরুটে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই হিসেবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে মিনিবাস ১০৫০টাকা, মাঝারী বাস ১৭৫০ টাকা এবং বড় বাস ২১০০টাকা। ট্রাক ১টন পর্যন্ত ৬৬০টাকা, ১ থেকে ৩টন পর্যন্ত ৭৪০টাকা, ৩ থেকে ৫টন পর্যন্ত ৮৮০টাকা, ৫ থেকে ৮টন পর্যন্ত ১০৬০টাকা ৮ থেকে ১১টন পর্যন্ত ১৪৬০ টাকা। মাক্রোবাস, এ্যাম্বুলেন্স, বড় টেম্পু, হিউমেন হলার ১হাজার টাকা। স্টেশন ওয়াগন, ল্যান্ড ক্রুজার,স্কাউট জাতীয় গাড়ী, বড় জীপ, প্রাডো নিশান, পাজোরো ও প্রেট্টোল জাতীয় লাক্সারী গাড়ী ৯শত টাকা। প্রাইভেটকার, জীপ, টেম্পো, ট্রেইলার ৫৪০টাকা। সিএনজি ট্যাক্সি ২৪০টাকা মটরসাইকেল ১শত টাকা এবং বাইকেল ৫০টাকা ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে।
সেই হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭২ লাখ ৯৪হাজার ১৬০ টাকা। কিন্ত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পূর্বে এর চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হতো।
ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস গোল্ডেন পরিবহনের এক সুপারভাইজার বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পূর্বে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাটে কমপক্ষে ৫/৬ ঘণ্টা যানজটে থাকতে হতো। কিন্ত পদ্মা সেতু উদ্বোধনে ফেরি ঘাটে আর যানজটে আটকা থাকতে হবে না। সুতরাং ঘাটে কোন যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ হবে না। এতে প্রতিটি গাড়ীতে যাত্রী বৃদ্ধি পাবে।
রাজবাড়ী থেকে রাবেয়া পরিবহনের নুরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, আজ দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে ১০ মিনিট অপেক্ষায় থাকতে হলো না। কিন্ত এই ঘাটে ১০/১২ ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয়েছে যানজটের কারণে। তিনি দুঃখ করে বলেন, পায়ে হেঁটে গেলে ১০ ঘণ্টা কম সময়ে ঢাকা যাওয়া সম্ভব। কিন্ত অনেকে যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে উভয় ঘাটে।
যাত্রীবাহী বাস পূর্বাশা পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাটের কর্মরত ছিদ্দিক শেখ বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট শ্মশান হয়ে গেছে। ব্যস্ততম এই ঘাট এখন যানবাহন শূন্য হয়ে পড়েছে। যে ঘাটে শতশত যানবাহন থাকতো। সেই ঘাটে এখন কোন যানবাহন নেই। হয়তো এই সংখ্যা আরোও কমে যাবে।
রাজবাড়ী ট্রাফিক সার্জেন্ট আকবর হোসেন বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে ডিউটিরত অবস্থায় স্বার্বক্ষনিক ব্যস্ত থাকতে হতো। কিন্ত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে কোন প্রকার যানবাহন নেই। যে কারণে অলস সময় কাঁটাতে হচ্ছে। সব মিলে বলা যায়, দুর্ভোগ মুক্ত হয়ে যাত্রী ও যানবাহন চালকগন ফেরি পার হতে পারছে।
বাংলাদেশ অভ্যঅন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা বন্দরের উপপরিচালক শাহ্ খালেদ নেওয়াজ জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করে অনেক যানবাহন ফেরি পারাপার হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় ৪০শতাংশ কম। আর এই নৌরুটে ২২টি ছোট বড় ফেরি রয়েছে। যানবাহন কম থাকার কারণে ৩টি ফেরি বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঈদের এক মাস পর বোঝা যাবে এই নৌরুটে কি পরিমাণ গাড়ী থাকে। এর পূর্বে বোঝা যাবে না। তবে এই নৌরুটে বর্তমান কোন দুর্ভোগ নেই। যাত্রী ও যানবাহন চালকগন এসেই ফেরি পার হতে পারবে।