সারাবছর ব্যস্ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অপেক্ষা ফেরি ঘাটে। ঝড়-বৃষ্টি। শীত-গরম। ঘন কুয়াশার মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা। এ যেন নৃত্য দিনের। এই যন্ত্রণার সাথে পাল্লা দিয়ে দালাল চক্রের কৃত্রিম যন্ত্রণা। যে কারণে দুর্ভোগ মুক্ত হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট পারাপার হতে পেরেছে কোন যাত্রী বা যানবাহন চালক এ সংখ্যা খুবই কম।
রবিবার সকাল থেকে ব্যস্ততম দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এবং দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চলের ২১ জেলার অর্ধেক যাত্রীবাহী পরিবহন দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে আসছে না।
পচনশীল পন্যবাহী ট্রাকগুলো পদ্মা সেতু ব্যবহার করা শুরু করেছে। যে কারণে ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ঝিমিয়ে পরেছে। সকাল থেকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকা দেখা গেছে সম্পন্ন ফাঁকা। যে সকল পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাস ফেরি ঘাটে আসছে তারা সহজে নদী পারাপার হচ্ছে।
গাপালগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাসা যাত্রীবাহী পরিবহন কমফোর্ট লাইন এর চালক মিজানুর রহমান জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন কমপোর্ট লাইন পরিবহন ২৬টি গাড়ী পারাপার হতো। আজ সেখানে মাত্র ৬টি গাড়ী নদী পারাপার হবে। তিনি বলেন, সন্ধ্যা হলে দৌলতদিয়া ঘাটে ট্রাফিক পুলিশ, বিআইডব্লিউটিসি এবং দালালের কারণে ঘাটে প্রতিটি যানবাহনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় হতো। এখন হয়তো সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।
যাত্রীবাহী বাস সোহাগ পরিবহন এর দৌলতদিয়া ঘাটের কর্মরত সুজন আহমেদ জানান, বাগেরহাট থেকে সায়েদাবাদ যেতে সর্বোচ্চ ৩ঘণ্টা লাগবে। সেখানে বাগেরহাট থেকে দৌলতদিয়া আসতে ৫ঘণ্টা লাগে। যে কারণে যানবাহনগুলো সহজে যাওয়ার জন্য পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরোও জানান, যাত্রীবাহী বাস সোহাগ পরিবহনের অর্ধেক যানবাহন সেতু দিয়ে যাওয়া শুরু করেছে।
যাত্রীবাহী বাস গ্রীন লাইন এর দৌলতদিয়া ঘাট সুপার ভাইজার বলেন, আজ সকাল থেকে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে গ্রীন লাইন বাস আসা বন্ধ করেছে। বিশেষ প্রয়োজন হলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে যানবাহন গুলো আসবে।
তবে পন্যবাহী কয়েকজন ট্রাক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফেরি ঘাট পার হতে ক্ষমতাশীল দলের টাকা, পুলিশের টাকা, দালালের টাকা সব মিলে একটি ট্রাক নদী পার হতে ৪হাজার টাকা লাগতো। সেতু শুরু হওয়ায় যানজটও থাকবে না। অতিরিক্ত টাকাও লাগবে না।
এসময় একজন নারী যাত্রী বলেন, নানা প্রকার দুর্ভোগ শিকার এবং অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে যেতে হয় গৌন্তব্যস্থানে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় হঠাৎ ব্যস্ততম দৌলতদিয়া ফাঁকা হয়ে গেছে।
এদিকে দৌলতদিয়া ঘাট ফাঁকা থাকায় সন্তষ্ট প্রকাশ করছে এই নৌরুট ব্যবহার করা অনেক যাত্রী ও চালক বৃন্দ। তারা বলেন, ফেরি ঘাটে আর সময় অপচয় হবে না।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা বন্দরের উপপরিচালক শাহ্ খালেদ নেওয়াজ জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওযায় অনেকে এই নৌরুটে আসছে না। এই বিষয়টি কমপক্ষে এক মাস পর বলা যাবে। এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে আজ সকাল থেকে যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ কম রয়েছে।
রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ (টিআই) তারক পাল জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় ঘাটে চাপ কম রয়েছে। অনেকে পদ্মা সেতু দিয়ে গৌন্তব্যস্থানে যাচ্ছে।