সময়-মুহূর্ত-দিন ঘনিয়ে এসেছে। ২৫ জুন শুভ উদ্বোধনের অপেক্ষায় স্বপ্নের “পদ্মা সেতু”। দক্ষিন-পশ্চিঞ্চলের ২১ জেলার স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সুফল হিসেবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দীর্ঘ বছরের টানা জনদুর্ভোগ স্থায়ী ভাবে মুক্ত হবে। রাজবাড়ী শহর থেকে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে রাজধানীতে যাওয়া-আসা সম্ভব হবে।
সরেজমিন ঘুরে এবং ঘাট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দৌলতদিয়া ঘাট থেকে রাজধানীর দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দূরত্ব মাত্র সাড়ে ৩ কিলোমিটার। কিন্ত এই সাড়ে ৩ কিলোমিটার নৌপথ পার হতে যাত্রীবাহী পরিবহন গড়ে ৭/৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ফেরি ঘাটে। পন্যবাহী ট্রাক চালকদের গড়ে ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ফেরি ঘাটে। সময়ের সাথে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হতো বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চালকদের। নানা প্রকার চরম দুর্ভোগে থাকতে হতো যাত্রীদের। পচনশীল পন্য ঘাটেই নষ্ট হয়ে যেত। লোকসান হতো ব্যবসায়ীদের। কিন্ত দীর্ঘদিনের এই জনদুর্ভোগ পুঁজি করে লাভবান হতো উভয় ঘাটে কর্মরত পুলিশ-বিআইডব্লিউটিসি এবং দালাল চক্র। জনকণ্ঠের গত ৩ মাসের একটি অনুসন্ধানে জানা যায়, যানজটের কারণে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে প্রতিদিন ৬০ হাজার কর্ম ঘণ্টা অপচয় হয়। কিন্ত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে ৬০ হাজার কর্মঘণ্টা অপচয় হওয়া থেকে মুক্ত পাবে।
জানাযায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট কুয়াশার সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকে। বর্ষার সময় স্রোত থাকে। শুকনো মৌসুমে নাব্যতা সংকট থাকে। সারাবছর থাকে ফেরি সংকট। এর সাথে যুক্ত হয় কৃত্রিম যানজট। সব মিলে সারাবছর দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চলের ২১টি জেলার রাজধানীমুখি মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো উভয় ঘাটে। অনেক সম্মানীত ব্যক্তিদের হতে হয়েছে লাঞ্জিত এবং শাররিক নির্যাতন। অকাণে যানবাহন চালকদের পরতে হয়েছে মামলার শিকার।
দৌলতদিয়া ঘাট থেকে রাজধানীর দুরত্ব মাত্র ৯৫ কিলোমিটার। দৌলতদিয়া থেকে খুলনার দুরত্ব ১৭৯ কিলোমিটার। সেই হিসেবে রাজধানীর চেয়ে খুলনার দুরত্ব দ্বিগুন। কিন্ত মাত্র সাড়ে ৩ কিলোমিটার নৌপথ পার হতে যত প্রকার দুর্ভোগ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সেই চিরচেনা যানজট হবে না। উভয় ঘাটে এসে সহজে ফেরি পার হয়ে গৌন্তব্যস্থানে যেতে পারবে সাধারণ মানুষ।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘাট যানজট মুক্ত থাকলে মাত্র ৩০ মিনিটে নদী পার হওয়া সম্ভব। পাটুরিয়া ঘাট থেকে রাজধানীর ৯১ কিলোমিটার রাস্তা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। রাজবাড়ী শহর থেকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের দুরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। সেই হিসেবে রাজবাড়ী শহর থেকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে আসতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। সেই হিসেবে রাজবাড়ী শহর থেকে ঢাকা রাজধানীতে যেতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। রাজবাড়ী জেলা কৃষি নির্ভরশীল। রাজবাড়ী জেলার সাথে ঢাকা রাজধানীর যোগাযোগ সহজ হলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে কৃষকদের। অল্প ব্যয়ে সহজে পন্য নিয়ে রাজধানীতে যেতে পারবে রাজবাড়ী জেলার কৃষক।
ঢাকাগামী এক পণ্যবাহী ট্রাক চালক বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট যানজট মুক্ত থাকলে আমরা সহজে চলাচল করতে পারবো। ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ঢাকায় যেতে পারবো। পদ্মা সেতু আমাদের গুরুত্বপূর্ন সময় বাঁচিয়ে দেবে।
রাজবাড়ী জেলা মটর শ্রমিক লীগের সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন তপু জানান, দীর্ঘ বছর যাবৎ দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে বিভিন্ন কারণে যানজট থাকায় রাজবাড়ী জেলার কৃষি পণ্য অল্প মূল্যে এলাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হতো সাধারণ কৃষক। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট যানজট মুক্ত থাকলে রাজবাড়ী জেলার সাধারণ কৃষক কৃষি পণ্য সরাসরি রাজধানীতে বিক্রি করতে পারবে। পদ্মা সেতুর সুফলে রাজবাড়ী জেলার কৃষি পন্য সহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন হবে। গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান।