সচেতন নাগরিক কমিটি রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে রোববার সকালে ‘নারী-শিশু ধর্ষণ ও সহিংসতা: বিচার চাই, নির্মূল কর, রুখে দাড়াও বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে রাজবাড়ী শহরের মিলেনিয়ম মার্কেটের সামনে প্রধান সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধন চলাকালে সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রফেসর মো. নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন সনাক সদস্য কমলকান্তি সরকার, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ রঞ্জন, রাবেয়া খাতুন, জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ক্রিস্টিনা মারিও রেখা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সনাক সদস্য সৌমিত্র শীল চন্দন।
বক্তারা বলেন, দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরে বাইরে, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই এর ভয়াবহ শিকার হচ্ছেন কন্যাশিশুসহ সকল বয়সী নারী। নৃশংসতার মাত্রা ও সংখ্যা বিবেচনায় সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশবাসী আতঙ্কগ্রস্ত সময় অতিবাহত করছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পাওয়া, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি কারণে সামাজিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে সমতাভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার অন্তরায়। এর প্রতিকার অবশ্যই করতে হবে। এসময় নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে টিআইবির ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও নতুন বাংলাদেশ এর মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্নভাবে নারী ও শিশু ধর্ষন এবং সব ধরনের যৌন নির্যাতন, সহিংসতা ও বৈষম্য প্রতিহত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন এবং সব অপরাধের সাথে জড়িতদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি অপরাধের স্বীকার পরিবারকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা।
সকল ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার ও বিদ্যমান আইনসমূহের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নারীর নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা।
সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন, পেশাজীবি সংস্থা, সকল প্রকার সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জাতি-ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে নারী পুরুষের সম-অধিকার ও সমমর্যাদার সুস্পস্ট অঙ্গীকার ঘোষণাসহ চর্চা প্রতিষ্ঠার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনায় অভীষ্ট-৫ (জেন্ডার সমতা) ও ১৬ (শান্তি ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান) কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সংিসতা ও নির্যাতন বন্ধের পূর্ব শর্ত হিসাবে দূর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সহআইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নানা অযুহাতে যত্রতত্র হেনস্থা রোধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন।
নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সকল প্রকার নারী অধিকার হরণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ করে প্রশাসন , আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার ব্যবস্থায় দূর্নীতি প্রতিরোধ, শুদ্ধাচার , জবাবদিহিতা ও সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করা।
জেন্ডার সমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদাবনে নারীর অভিগম্যতা নিশ্চিত, ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস সুলভ করা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিশেষায়িত জাতীয় কৌশল প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিবারে কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাঙ্গনে বা সমাজে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ্য কাজ করেছেন তাদের উৎসাহিত, সঠিক প্রশিক্ষন এবং প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা ও সুরক্ষা প্রদান করা।
মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সকল প্রতিষ্ঠানে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাসহ নারীবান্ধব অভিযোগ প্রদান ও নিরসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, নারী নির্যাতন, ধর্ষন ও যৌন হয়রানী বন্ধে ব্যক্তির রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক অবস্থান, মর্যাদা ও প্রভাব বিবেচনা না করে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত বিচার নিষপত্তি করা।
নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারী পূরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে সাধারণ জনগনের ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর প্রচারমূলক কার্যক্রম গ্রহন করা।
জাতীয় হেল্প লাইন ও অভিযোগ জানানোর হট লাইন নম্বরগুলোর প্রচার ও কার্যকরতা বৃদ্ধি।