রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পদ্মা নদী থেকে ড্রেজিংকৃত বালু উত্তোলন, পরিবহন ও বিক্রি বন্ধে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বালুবাহী ড্রামট্রাক চলাচলের রাস্তা কেটে মাঝ বরাবর বাঁশ পুতে দেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, পদ্মা নদীর পাড়ে থাকা ৭ নং ফেরিঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বার পাড়ার কয়েকশ পরিবার চরমভাবে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘাটের নাব্যতা বজায় রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এখানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন করে গ্রামের পাশের বালুর এক বিশাল এলাকা গড়ে তুলেছে। উত্তোলিত সেই বালু কিছুদিন ধরে অবৈধভাবে কয়েকটি ভেকু মেশিন দিয়ে তুলে শতাধিক ড্রাম ট্রাক যোগে প্রতিনিয়ত বিক্রি করছে কয়েকজন। ড্রাম ট্রাকগুলো নদী হতে উপরে উঠার জন্য পাড় কেটে একটি লম্বা রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে গ্রাম রক্ষার জিও ব্যাগগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া অনবরত ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে প্রচন্ড ধুলোবালিতে এলাকার মানুষের স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসও নিতে কষ্ট হচ্ছে। খাবার সময় বালু পড়ে নোংরা হয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনারও আশংকা রয়েছে। গত বছর এখানে ড্রাম ট্রাকের চাপায় একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে মোশাররফ হোসেন মুসা মন্ডল বলেন, আমরা কেউই অবৈধভাবে বালু তুলছি না। যেখানে ড্রেজিংকৃত বালু ফেলা হয়েছে সেখানে তাদের প্রায় ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। অন্যদেরও কমবেশি রয়েছে। তাছাড়া ওই বালু প্রশাসন টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করেছে । টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী জমির মালিক হিসেবে আমি একটি অংশ বরাদ্দ পেয়েছি এবং আরো কিছু এলাকা টেন্ডার পাওয়া এসএম মোল্লা ট্রেডার্সের কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। সেই বালুই তুলে বিক্রি করছি। তাছাড়া অভিযোগকারী শহীদ পাল ও গফুর পালকে ড্রাম ট্রাক চলাচলে তাদের জমি ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫৮০ টাকা প্রদান করেছি। তারা আরো বেশি টাকা দাবি করছে। তা না মানাতে আজ কিছু লোকজনকে নিয়ে মানববন্ধন করেছে।
এ বিষয়ে গফুর পাল ও শহীদ পাল বলেন, আমরা জনস্বার্থে মানববন্ধন করেছি। বালু বাবদ তাদের কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেইনি। তবে বেশ কয়েকগাড়ি বালু কিনেছিলাম। সেই বাবদ লেনদেন আছে।
এদিকে স্থানীয় কয়েকজন জানান, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় মন্ডল এবং পাল বংশ উভয়ই বেশ দাপুটে। উভয় গ্রুপেই বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী রয়েছে। বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন বিশৃঙ্খলা না করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। তবে বালু টেন্ডারের বিষয়ে তিনি কোন কিছু না বলে উর্ধ্বতন পর্যায়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।