রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

সাহিত্য হচ্ছে জীবনের পর্যালোচনা- অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১০৩ Time View

বিশিষ্ট লেখক গবেষক ও চিন্তক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, সাহিত্য হচ্ছে জীবনের পর্যালোচনা। ক্রিটিসিজমের কথা এই নয় যে, আমি জীবনকে সমালাচনা করে ফেলে দিচ্ছি। ক্রিটিসজম মানে ভালো করে চিবিয়ে তার রসটা হজম করা এবং যা কিছু অপাঙক্তেয় তাকে পংক্তির বাইরে ফেলে দেওয়া। সে হিসেবে দেখলে জীবনের সততা বা সত্য তুলে ধরাই সাহিত্যের কাজ।
রাজবাড়ীর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের নিয়মিত আয়োজন সাহিত্য বৈঠকে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। শুক্রবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নাসিম শফি।

সাহিত্যের উৎস ধারা শিরোনামে এ সাহিত্য বৈঠকের মিডিয়া পার্টনার দৈনিক আমাদের রাজবাড়ী।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন হলো তার পেছনে অনেক মানুষের রক্ত, অনেক মানুষের অশ্রু, অনেক মানুষের আত্মত্যাগ ছিল। যেটার হয়তো কোনো প্রয়োজনই হতো না, যদি আমরা ১৯৭১ সালের আদর্শকে সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পারতাম বা পালন করতে পারতাম। এই যে বিপুল মানবসম্পদ ধ্বংস হলো, মানুষের প্রাণ গেল, সবচেয়ে বড় কথা মানুষের বিশ্বাসের অপচয় হলো এটা ভাবতেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হিসেবে সাম্য মানিবক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার গত ৫০ বছরে তা ক্রমশই দূরে সরে গিয়েছে। তার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে আমাদের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যেতে বসেছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আমাদের তরুণ সমাজ বিশেষ করে তাদেরকে সমর্থন করেছেন বেশির ভাগ মানুষ। রাজনৈতিক পরিবর্তনে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ বাদ দিলে সকলেই খুশী হয়েছে। কিন্তু দেশ আজ অজানা অবস্থার মধ্যেই আছে। আমরা শুধু আশা করতে পারি, এই অবস্থায় আমাদের দেশে মত প্রকাশ, বাক স্বাধীনতা, সাহিত্য রচনার সুযোটা কমবে না বরং বাড়তে পারে। কিন্তু গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাহিত্য যে অবস্থায় ছিল এক অন্ধকার যুগ। সাহিত্যের দিকে যদি তাকাই আমি সাহিত্যের সবকিছু পড়িনি, অন্তত যেটুকু পড়েছি। আমরা কথা বলি নমুনার ভিত্তিতে। গল্প উপন্যাস বা কথা সাহিত্য বা কবিতা, নাটক এর সবগুলো মিলিয়ে যদি বলেন তাহলে ক্রমশ আমরা এক ধরনের আত্ম সন্তুষ্টিতে ছিলাম। যার ফলে সাহিত্য ক্রমেই প্রশ্নহীন হয়ে উঠছিল। অনেকের ধারণা সাহিত্য হচ্ছে আমোদ বা বিনোদনের সামগ্রী। যখনই সাহিত্য সেখান থেকে দূরে সরে যায় সেটা জাগতিক সাফল্যের জন্য হতে পারে, অনেক সময় গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য হতে পারে। তখন জাতির জন্য, দেশর জন্য, জনসমাজের জন্য এক দুর্যোগ নেমে আসে। আমরা তেমনই একটা দুর্যোগ পেরিয়ে এসেছি বলতে পারলে খুশী হতাম। কিন্তু আমরা সেটা অতিক্রম করেছি কীনা এখনও পরীক্ষার ব্যাপার। এই পরীক্ষামূলক সময়ে রাজবাড়ী আসতে পেরে আনন্দ প্রকাশের অবকাশ হলো।

অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজা খানম, সহ-সভাপতি চৌধুরী অধ্যক্ষ চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ নুরুল হক আলম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি খোকন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের এনডিসি নাহিদ আহমেদ, জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস, নারী নেত্রী অ্যড. দেবাহুতী চক্রবর্তী, রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সহ সভাপতি আতাউর রহমান, সাংবাদিক আবু মুসা বিশ্বাস, রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ বাসার আকাশ, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হালিম বিশ্বাস, রাজ্জাকুল আলমসহ জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পরে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানকে ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com