শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

সামি আহমেদ অবাঙালি হয়েও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে

॥ মেহেদী হাসান ॥
  • Update Time : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৭ Time View

সামি আহম্মেদ খান ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গনে অংশগ্রহন না করলেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে। ১৯৫৪ সালের ১৫ অক্টোবর তিনি ভারতের. বিহার প্রদেশের বর্তমান বাইশালি জেলার পোখড়ায়রা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতা নবী হোসেন খান । পিতার মৃত্যুর পরে মায়ের হাত ধরে সামি আহম্মেদ খান তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশে আসেন এবং রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইলিশকোল গ্রামে বসবাস শুরু করেন।

‘৭১ এর ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা নির্বিচারে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে মুক্তিকামী মানুষ। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি এলাকায় পাকিস্তান মিলিটারি মানুষের ওপর হামলা চালায় তখন সামি আহম্মেদ খান তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন। অবাঙালি বিহারী হয়েও তিনি এই দেশ ও দেশের মানুষ কে ভালবেসেছিলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তিনি কাজ করেছেন। ভূমিকা রেখেছেন বাঙালির এই স্বাধীনতা যুদ্ধে। ইতিমধ্যে তার চোখে দেখা ও তার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করার গল্প মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জ-৩৮২৩৮ নম্বরে লিপিবদ্ধ হয়েছে।

অশ্রুশিক্ত নয়নে সামি আহম্মেদ খান আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে এদেশের পক্ষে কাজ করেছি। পাকবাহিনী থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করেছি। কোন মানুষ যেন হামলা নির্যাতনের শিকার না হয় সে চেষ্টা করেছি। এতো কিছু করার পরেও পাইনি কোনো স্বীকৃতি। শেষ বয়সে আমার চাওয়া নিজের জন্য না। আমরা সন্তানরা যাতে সমাজে মাথা উচু করে বাঁচতে পারে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের পিতার অবদান গর্ভকরে বলতে পারে। এ জন্য চাই সরকারিভাবে স্বীকৃতি। ব্যক্তিজীবনে দুই ছেলে রয়েছে তার। বড় ছেলে গিয়াস উদ্দিন খান (৪৩) একটি সিমেন্ট কোম্পানীতে মাগুরা জেলায় চাকরি করেন। ছোট ছেলে মো. শরিফ খান সে প্রতিবন্ধী। সেই বাড়ী দেখাশোনা করে।

ইলিশকোল গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব আলী শেখ (৭৭) ও আকবর আলী শেখ (৮০) ‘৭১ এর সেই পরিস্থিতির বর্ননা দিয়ে বলেন, এই আড়কান্দি রেলস্টেশন থেকে মিলিটারি ইলিশকোল গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের জন্য যখন আসে। গ্রামের সকল মানুষ আতঙ্কিত হয়ে সামি আহম্মেদের বাড়িতে গেলে সামি আহম্মেদ পাকিস্তানি মিলিটারির সাথে কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দেয় এবং অগ্নিসংযোগ লুটপাট থেকে এই গ্রাম রক্ষা করেন।

পাক হানাদারবাহিনী বহরপুরের তেঁতুলিয়া গ্রাম আগুনে জালিয়ে দেয় এবং প্রায় ২৫-৩০ জনকে আটক করে রেলগেটে নিয়ে যায়। সামি আহম্মেদ খান খবর পেয়ে সেখানে পৌছে তাদের বুঝিয়ে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। সামি আহম্মেদ খান ও তার মা জহুরা বেগম পাক হানাদারবাহিনী থেকে আমাদের এই এলাকা রক্ষা করেছে। ওই সময় প্রতি মুহূর্তে আমাদের আতঙ্ক কাজ করেছে কখন কি হয়।

স্থানীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য অশোক লাহিড়ী বলেন, সামী আহম্মেদ খান অবাঙালি বিহারী হলেও স্বাধীনতার স্বপক্ষে কাজ করেছেন। তিনি এই এলাকায় বসবাস করে যুদ্ধকালীন সময় এরো আগে থেকেই। আমাদের এলাকায় যাতে কোন বিহারী ও পাক-হানাদারবাহিনী আসতে না পারে সেই ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।

বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের যাবরকোল এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক মোল্লা (৭৪) বলেন, তৎকালীন চন্দনা নদীর খেয়া ঘাটে ছোট নৌকা নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আমাকে গুলি করার উদ্দেশ্যে বন্দুক তাক করে। তখন সামি আহম্মেদ তাদের থেকে আমাকে রক্ষা করে। স্থানীয় ডা. সেলিম এর ভাই আবজাল ডাক্তারকে বালিয়াকান্দি থেকে মিলিটারি ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে, পরে সে খোঁজ পেয়ে চলে আসে এবং মিলিটারি হাত থেকে তাকেও রক্ষা করে। শুধু তিনি না তার মা’ও আমাদের জন্য কাজ করেছেন। পাক-হানাদারবাহিনীর গাড়ি আসলে তার মা তাদের ভুল বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিতেন। সামী অনেক সময় আমাদের সাথে থেকেছে। তিনি পাক হানাদারবাহিনীর তথ্য আমাদেন দিতেন। সামি আহম্মেদ ও তার মা পাক হানাদারবাহিনীর লুটপাট অগ্নিসংযোগ থেকে স্থানীয়দের রক্ষা করেছে। তার সাথে আমার এখনো যোগাযোগ আছে। সামি আহম্মেদ সশস্ত্র যুদ্ধ অংশগ্রহন না করলেও তিনি অনেক কিছু করেছেন দেশের জন্য। তার স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com