শনিবার সকালে উপজেলার পশ্চিম উজানচর নবুওছিমদ্দিন পাড়া এলাকায় ঠিকাদার রাজ্জাক সরদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বাড়ির সামনের সরকারী খালের জায়গা দখল নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর, ভাঙচুর এবং নগদ ৭ লক্ষ টাকা ও প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণালংকার লুটপাটের আভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রাজ্জাক (৪২) গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, নবুওছিমদ্দিন পাড়ার বাসিন্দা মো. রাজ্জাক সরদারের সাথে প্রতিবেশী মো. আজাহার নলিয়ার (৬০) বাড়ির জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল। শনিবার ভোরে সেহরি খেয়ে রাজ্জাক তার বাড়ির দোতলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৬ টার দিকে তার বাড়ির উঠানে ৩ জন ট্রলি চালক ইট ফেলতে শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজহার নলিয়া (৬০), তার ভাই আনোয়ার নলিয়া (৪৫) এবং ছেলে জাকির নলিয়া (৩৫) ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে রাজ্জাকের বাড়ির উপর চড়াও হন। এ সময় তারা রাজ্জাককে চিৎকার করে ডাকাডাকি করলেও তিনি শুনতে পান না। এক পর্যায়ে তারা রাজ্জাকের ভবনের নিচ তলার দেয়ালে লাগানো তিনটি সিসি ক্যামেরা ও দুইটি বৈদুতিক মিটার ভাংচুর করে। এ সময় ট্রলির চালকরা তাদেরকে নিষেধ করলে তাদেরকেও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়।
ঘটনার এক পর্যায়ে হামলাকারিরা ভবনের প্রধান ফটকের লোহার দরজা খোলা পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে রাজ্জাকসহ পরিবারের সদস্যদের মারপিট শুরু করে এবং রাজ্জাকের গলায় ধারালো ছুরি ঠেকিয়ে আলমারি, ড্রয়ার ও ওয়ারড্রব ভাংচুর করে। এ সময় তারা আলমারিতে থাকা নগদ ৭ লক্ষ টাকা ও প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়।
ভুক্তভোগী রাজ্জাক সরদার বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বরাবর সরকারি মরা খাল চলে গেছে। সবাই খালের ওপার বাড়ি করার পর খাল ভরাট করে চলাচল করে থাকে। আমিও সেভাবেই চলাচল করছি। কিন্তু সরকারি ওই খাল নিজেদের দাবি করে আজাহার নলিয়া আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। ইতিপূর্বে শালিস শেষে থানার ওসি ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমার বাড়ির সামনের খাল আমাকেই ভোগ দখলের কথা বলে দেয়। কিন্তু তারা তা মেনে নিতে পারছে না। আজ ভোরে আমার কিছু ইট আমার ভরাটকৃত জায়গায় ফেলানো দেখে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা আমার ঘরে ঢুকে আমাকে মারধর করে এবং গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ ৭ লক্ষ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণ লুট করে। সেইসাথে আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে হত্যা করার জন্য গলা চেপে ধরে। আমার স্ত্রী ও আমার মাকেও লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করে এবং ঘরের সবকিছু তছনছ করে। আমাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
ঘটনার বিষয়ে ট্রলি চালক নুর ইসলাম ফকির, ইউসুফ শেখ ও আমিন শেখ বলেন, আমরা হামলাকারিদের থামানোর চেষ্টা করলে তারা আমাদেরকেও মারধর করে এবং চুপচাপ না থাকলে আমাদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
শনিবার সকাল ১০ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে হামলা, ভাংচুর ও তছনছের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ সময় অভিযুক্ত আজহার নলিয়ার স্ত্রী খালেদা বেগম দাবি করে বলেন, রাজ্জাকের ভরাট কৃত জায়গা তাদের নিজেদের। সেখানে রাজ্জাক পাকা কাজের জন্য ইট ফেললে আমার ছেলে জাকির সেখানে নিষেধ করতে যায়। কিন্তু ডাকাডাকিতে কেউ না শোনায় রেগে গিয়ে শুধুমাত্র বাইরের লাইটটা ভাংচুর করে। আর কিছু ভাঙ্গেনি এমনকি বাড়ির ভিতরেও তাদের কেউ প্রবেশ করেনি। লুটপাটের অভিযোগ মিথ্যা ।
গোয়ালন্দ ঘাট থানা চত্বরে কথা হয় প্রধান অভিযুক্ত আজহার নলিয়ার সাথে। তিনি সরকারি ওই খালের জমিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করেন এবং রাজ্জাকের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রানবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, রাজ্জাক সরদারের দেয়া অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।