রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চারটি মৌজায় সরকারি খাস-খতিয়ানভুক্ত জমির রেকর্ড সংশোধন করে প্রকৃত মালিকদের নামে রেকর্ড জারি ও খাজনা চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ উপলক্ষে জমির আরএস রেকর্ডীয় মালিকরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের আওতাভুক্ত পদ্মা নদী দ্বারা মূল ভুখন্ড হতে বিচ্ছিন্ন মৌজা চারটি হলো ৫নং বেতকা, ৪নং রাখালগাছি, ৮নং বড়সিংড়া ও ৯নং বড়বিল। মৌজা চারটিতে মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ২৪৬.৭৩ একর। খাজনা বন্ধ থাকায় রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জেগে ওঠে ওই মৌজাগুলো। এখন সেখানে অনেক পরিবারের বসবাস। চলে চাষাবাদ। মৌজাগুলোকে ঘিরে সেখানে গড়ে উঠেছে জনপদ, হাটবাজার, মসজিদ, আশ্রয়কেন্দ্র, উপ- স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা প্রভৃতি।
এছাড়া এখনে গড়ে উঠেছে দেবগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ ১ নং ওয়ার্ডটি। যেখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৯৬৫। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। ভূমি অফিস ও ভূমি মালিকরা জানান, ৫ নং বেতকা মৌজায় মোট জমির পরিমাণ ৪৯৮ একর ৮০ শতাংশ, ৪নং রাখালগাছি মৌজায় মোট জমির পরিমাণ ৬৬১ একর ৩৬ শতাংশ, ৮নং বড়সিংড়া মৌজায় মোট জমির পরিমাণ ৬৭ একর ৮২ শতাংশ এবং ৯নং বড়বিলা মৌজায় মোট জমির পরিমাণ ১৮ একর ৭৫ শতাংশ। বেতকা মৌজার বেশিরভাগ জমি খাস খতিয়ানে থাকলেও এখানে রয়েছে ২১নং বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেতকা জামে মসজিদ, নবনির্মিত ইটের তৈরি রাস্তাসহ দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। ১৯৪০-৪২ সালে আর এস রেকর্ড অনুযায়ী এই জমির মালিক ছিলেন বেতকার বাসিন্দারা। বেতকা এলাকাটি নদী মাতৃক মৌজা হওয়ায় বারবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ১৯৭৭-৭৮ সালে দিয়ারা রেকর্ডে ৫নং বেতকা মৌজার ৪৯৮.৮০ একর জমি ১নং খাস খতিয়ানে চলে যায়। তবে তার মধ্যে ১১.৩২ একর ভূমি প্রজা বা কিছু মালিকের নামে দিয়ারা রেকর্ড চূড়ান্ত হয়।
দিয়ারা রেকর্ডের মালিক আফতার ফকির, সামছুল ফকির, ফজলু সরদার, শহিদ সরদার, আনছার আলী, সুফিয়া খাতুনসহ বেশ কয়েকজন জানান, তাদের জমি খাস-খতিয়ান থেকে রেহায় পাই। বাকী জমি সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত রয়েছে।
ভুক্তভোগী ভূমি মালিক মো. রিয়াজ উদ্দিন খান, আক্কাছ কাজী, জসিম উদ্দিন মন্ডল, মো. কাশেম মন্ডল, মো. ইরাদ আলী ঠাকুর, মো. পাথর আলী ঠাকুর, মো. সামাদ মন্ডল, ইউনুছ মৃধা, মো. আকু প্রামানিক, আনোয়ার মেম্বার, মো. মোহন ঠাকুর, মো. ইশারত ঠাকুর, মো. তাহের আলী ঠাকুর, মো. ওসমান মন্ডল, আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল, মো. বাহের মন্ডল, আলম মৃধা, মোহন প্রামানিকসহ আরো অনেকে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমাদের বাপ-দাদা এতোদিন এই জমিতে ভোগদখলে ছিলো এখন আমরা ভোগ দখলে রয়েছি। আমরা আমাদের নিজেদের নামে জমির রেকর্ড জারি এবং খাজনা চালুর দাবি জানাই।
বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মো. রিয়াজ উদ্দিন খান বলেন, আমাদের জন্ম এই চরে। আমার বাপ-দাদা এই জমিতেই বসবাস ও চাষাবাদ করেছে। এখন আমরা বসবাস ও চাষাবাদ করছি। এলাকাটি নদী-মাতৃক হওয়ায় ভুলক্রমে খাস খতিয়ানে চলে গেছে। দখল ও দাগ অনুযায়ী ভূমি মালিকগণ ভোগ দখলে আছে। আমরা রেকর্ড সংশোধন করে ভূমিকর দিতে রাজী আছি। সরকার যদি আমাদের রেকর্ড সংশোধন করে যার যার জমির খাজনা দেয়ার সুযোগ করে দেয় তাহলে এই মৌজা থেকে সরকারের ভূমি রাজস্ব খাতে অনেক আয় হবে। তাছাড়া খাজনা চালু না হওয়ায় আমরা প্রয়োজনে এই জমি বেঁচাকেনা, ব্যাংক বা এনজিও সংস্থা হতে লোন নিতে পারছি না।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, বেতকা ও রাখালগাছি মৌজা ঘিরে পদ্মা নদীর ওপারে দেবগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ একটি ওয়ার্ড গড়ে উঠেছে। বর্তমানে সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে আরএস রেকর্ডের মালিকরা বসবাস করছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ মৌজাগুলো ১নং খতিয়ানভুক্ত যাওয়ায় মালিকগণ খাজনা দিতে পারছেন না। আমি এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। যাতে মালিকগণ তাদের জমির খাজনা দিতে পারেন।