শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন

‘নিরাপদ স্কুলে ফিরি’ কর্মসূচি ১৮টি স্কুলের ৭ হাজার শিশু পাচ্ছে সহায়তা

গোয়ালন্দ প্রতিনিধি ॥
  • Update Time : বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৫৪ Time View

গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় যৌনপল্লী ও পাশ্ববর্তী এলাকার ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৭ সহস্রাধিক শিশুকে ঝরে পড়া হতে রক্ষা করা এবং তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস)। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সেভ দ্যা চিলড্রেনের সার্বিক সহায়তায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮টি স্কুলভুক্ত এ সকল শিশুদের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, বিদ্যালয়সমূহে লাইব্রেরি স্থাপন, অভিভাবকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, সচেতনতা বাড়াতে গ্রাম পর্যায়ে কমিটি গঠন, নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা, প্রচার-প্রচারনা চালানোসহ নানা ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে । এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ হতে শুরু হওয়া এ প্রকল্প শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ আগষ্ট তারিখে। ফলে পরবর্তী পরিস্হিতি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ পেয়েছে উপকারভোগী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মুখে।

মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ বিষয়ে মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মোস্তফা মুন্সি। বিশেষ অতিথি ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান মামুন ও গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল।

সভায় বক্তারা বলেন, যৌনপল্লী এবং পল্লীর নারী ও শিশুরা এ সমাজেরই একটি অংশ। তাদেরকে অবহেলা করে পিছে ফেলে রেখে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য পল্লী ও পল্লীর আশপাশ এলাকার পিছিয়ে পড়া শিশুদের এগিয়ে নিতে এ কর্মসূচি চালু থাকা খুব প্রয়োজন। সভাপতির বক্তব্যে ফকীর আব্দুল জব্বার বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছরে লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ঝড়ে পড়েছে অনেক শিশু। এ ঝরে পড়া ঠেকাতে যৌনপল্লী ও আশপাশের শিশুদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে সেখানকার শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। এর জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করি।

বিশেষ অতিথি গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কেকেএস স্কুল পরিদর্শন কালে প্রায় তিন ঘন্টা অবস্থান করে কেকেএস স্কুলের শিশু ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। তখন তিনি শিশুদের উন্নয়নে কেকেএস এর কর্মপ্রয়াসকে স্বাগত জানান ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নের ভূয়সী প্রসংসা করেন। গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, “গোয়ালন্দ উপজেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে কেকেএস এর ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার”।

সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে কেকেএস এর সহকারী নির্বাহী পরিচালক ফকীর জাহিদুল ইসলাম মত বিনিময় সভার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় উপস্থাপন করেন। করোনা পরবর্তী সময়ে শিশুদের স্কুলমূখী করার গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন।
সভায় নিরাপদ ইসকুলে ফেরা বিষয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন সাইফুল ইসলাম খান সেলিম, ম্যানেজার সেভ দ্য চিলড্রেন। তিনি বলেন, করোনা কালীন সময়ে অনলাইন ক্লাস হলেও শিশুরা এর সুবিধা খুব বেশী পায়নি। এমতাবস্থায় কেকেএস পরিচালিত রিল্যাক্স প্রকল্পের শিক্ষকরা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে শিশুদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে পাঠদান করেন।

যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, ফকীর আব্দুল জব্বার নামই একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি আরো বলেন কেকেএস, সেভ দ্য চিলড্রেন সরকারের সাথে অত্র এলাকায় সুন্দর ও সফলভাবে শিশুদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। গোয়ালন্দ একটি নদী ভাঙ্গন কবলিত দরিদ্র এলাকা, ডোর টু ডোর অনুঘটক তৈরীর মাধ্যমে এলাকার শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন করা যেতে পারে। তিনি রিলাক্স প্রকল্পটির মেয়াদ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে অভিমত দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে শিক্ষার উন্নয়নে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব, কেকেএস সেভ দ্য চিলড্রেন তার জলন্ত উদাহরণ, গোয়ালন্দের সকল শিশুদের এই প্রকল্পের সুবিধার আওতায় আনা প্রয়োজন।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, আমাদের সকলে মিলে চেষ্টা করা প্রয়োজন দৌলতদিয়া যৌন পল্লীর শিশু ও নারীদের বিকল্প পেশা সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাদের এই পেশায় সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত করা। তিনি বলেন, শুধু শিক্ষা উপকরণ দেওয়া নয় দৃষ্টি ভঙ্গির উন্নয়ন ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইতিবাচক সমাজ ব্যবস্থা তৈরী করা প্রয়োজন। ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, শৃঙ্খলা ও সুস্থ জীবনাচরণ শেখানোর মাধ্যমে শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব। দেবগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা হলো চিন্তা চেতনার বিকাশ সাধন, শুধুমাত্র স্নাতোকোত্তর হলেই মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হয় না। দশ লক্ষ রহিঙ্গাদের যদি আমরা সহযোগিতা করতে পারি তাহলে দৌলতদিয়া যৌন পল্লীর শিশু ও নারীদের কেন পারব না ? তাদেরকে সরকারী সহযোগিতার আওতায় আনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রৗ শেখ হাসিনার নিকট সভার মাধ্যমে তিনি আবেদন করেন। রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের বলেন, কেকেএস শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন সময়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে যে পাঠ দান করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস পারভিন বলেন, “ফকীর আব্দুল জব্বার এলাকার গর্বিত সন্তান, তার জন্ম না হলে অনেকের শিক্ষার আকাংখাই অপুর্ণ রয়ে যেত”।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com