রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বি সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ ৩২ জন শিক্ষককে সুকৌশলে ভোটার তালিকা হতে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ক্ষুদ্ধ শিক্ষকরা সমিতির সভাপতি মো. বাবর আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে গত ৩১ জুলাই (রবিবার) সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পত্রে শিক্ষকরা ইতিমধ্যে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাতিল করা, বাদ পড়া সকল শিক্ষকের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর একজন শিক্ষক স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষক সংগঠনের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের বিদ্যমান তালিকা হতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাদের অনুসারী কয়েকজন শিক্ষক নেতা ৩২ জন শিক্ষককে বাদ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষমতাকে সুকৌশলে আরো দীর্ঘায়িত করতে চায়। কিন্তু ইতিমধ্যে ৪ বছর মেয়াদি এই কমিটি ৯ বছর পার করে ফেলেছে। এর মধ্যে তারা বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছে। সেগুলো ঢাকতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। সাধারণ শিক্ষকদের চাপে তারা নির্বাচন দিতে রাজি হলেও এ নিয়ে নানা কারসাজি শুরু করেছে।
সদ্য বিলুপ্ত কমিটির কোষাধ্যক্ষ সহকারী শিক্ষক বিমল কুমার রায় বলেন, তিনি সভাপতি পদে মনোনয়ন ফরম নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ফরম দেয়াই হয়নি। তাছাড়া কোষাধ্যক্ষ হিসেবে সমিতির আয়-ব্যয় সম্পর্কেও কোনদিন তাকে কিছু জানতে দেয়া হয়নি। এমনকি তাকে না জানিয়েই সর্বশেষ সভা করে ৩২ জন শিক্ষককে ভোটার তালিকা হতে বাদ দেয়া হয়েছে।
সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ সরদার, মনিরুজ্জামান মনির, সাত্তার হোসেন, সুজিত কুমার, জহির রায়হানসহ অনেকেই বলেন, তাদের মধ্যে অনেকেরই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ রয়েছে। সমিতির আইন ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তাতে কোন বাধাও নেই। তারপরও আমরা কয়েকজন সভাপতির পরামর্শে ‘সহকারী শিক্ষক সমাজ’ হতে পদত্যাগ করলেও আমাদের বাদ দেয়া হয়।মূলত নিশ্চিত পরাজয়ের আশংকায় বর্তমান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাদের কয়েকজন সহযোগী অকৌশলে নির্বাচন ছাড়াই পকেট কমিটি গঠনে তৎপর হয়ে উঠেছে। উপজেলার সাধারণ শিক্ষকরা তাদের এ অপচেষ্টা মানে না। তারা পরিবর্তন চায়।
এ বিষয়ে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মো. বাবর আলী বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪ টি শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। মোট শিক্ষক সংখ্যা ২৭২ জন। এর মধ্যে যারা অপর ৩ টি সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন এমন ৩২ জনকে আলোচনা সাপেক্ষে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ভোটার তালিকা হতে বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ যাওয়া শিক্ষকদের অভিযোগগুলো সঠিক নয়। কোন অনিয়ম দুর্নীতির সাথেও আমরা যুক্ত নই।
তবে অন্য কোন শিক্ষক সংগঠনে যুক্ত থাকলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতিতে থাকা যাবে না এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালার বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন জানান, বাদপড়া শিক্ষকরা তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সংসদ সদস্যও এ বিষয় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।