শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মের খোঁজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

শফিকুল ইসলাম শামীম ॥
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২
  • ১৫৮ Time View

জায়গা হয়নি বাবা-মায়ের সংসারে। জায়গা হয়নি আত্মীয়-স্বজনের পাশে। জায়গা হয়নি নিজস্ব সমাজে। কাজ করার সুযোগ হয়নি সকলের সাথে মিলে-মিশে। তাই বাধ্য হয়ে পথে-প্রান্তে। ছুটতে হয় জল ও স্থলপথে। তবুও কোথায়ও যেন ঠাঁই নেই। আছে শুধু লাঞ্ছনা-গ্লানি। তাই বাধ্য হয়ে লাজলজ্জা, গ্লানিবোধটুকু বিসর্জন দিয়ে পেটের দায়ে পথে-প্রাপ্তে। ওরা সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

রাজবাড়ীর তৃতীয় লিঙ্গের কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের জীবনের কষ্ট-বেদনার কথা। এসময় তারা অভিযোগের সুরে বলেন, সমাজ আমাদের জায়গা দেয় না। এই সমাজ আমাদের কাজ দেয় না। জায়গা হয় না বাবা-মায়ের কাছে। তাহলে আমরা কোথায় যাবো? কি খাবো?

রাস্তায় বের হলে অনেকে আমাদের নিয়ে কিছু সময়ের জন্য আনন্দ করে। কিন্ত পাশে বসার জায়গা দেয় না। তাই আমরা আপন ঠিকানা, আপন ঘর রেখে চলে যাই অজানার পথে। অজানার পথের বিভিন্ন জেলার ভাই-বোনেরা একটি জায়গায় সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করার চেষ্টা করি। কর্মের জন্য ছুটি রেলষ্টেশন, বাস-ট্রাক টার্মিনালে। ছুটি লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে। চলি পথে-প্রান্তে এবং জল ও স্থলপথে। কর্মের জন্য ছুঁটে বেড়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আমার সন্ধ্যার পর এক বুক দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা নিয়ে ছুটে যাই অন্ধকারের কঠিরে। যেখানে আপন বলতে কেউ নেই। কেউ কখনও দেখতে আসে না। পথে-প্রান্তে আপনজনের সাথে দেখা হলেও পাশ-কাটিয়ে চলে যায়। সেই কষ্টের কথা বলে শেষ করা সম্ভব নয়।

দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চলের রাজধানীর সাথে যোগাযোগের প্রধান নৌপথ রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাট এবং মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাট। দুই পারে লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে অবস্থান করে বিভিন্ন বয়সের অর্ধশত তৃতীয় লিঙ্গের অবহেলিত মানুষ। পাটুরিয়া পারের তৃতীয় লিঙ্গের অবহেলিতদের নেতেৃত্বে দেয় মৌসুমি এবং দৌলতদিয়া ঘাটের নেতেৃত্ব দেয় মাহি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উভয় পারের অর্ধশত তৃতীয় লিঙ্গের অবহেলিতদের আয়ের প্রধান উৎস বাস-ট্রাক টার্মিনার, রেলষ্টেশন, লঞ্চ-ফেরি ঘাট। সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে বেড়িয়ে পরে। কেউ রেলষ্টেশনে, কেউ বাস-ট্রাক টার্মিনালে। কেউ লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে। ছুটতে হয় মানুষের দ্বারে দ্বারে। ফেরি ও লঞ্চে থাকা যাত্রীদের কাছে হাত পেতে সহযোগিতা নিতে হয়। এসময় অনেক লাঞ্জনা-গ্লানি সহ্য করতে হয়। সহ্য করতে হয় স্থানীয়দের নির্যাতন। আবার কর্মে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় লঞ্চ ও ফেরি থেকে লাভ দিতে হয়। অনেক সময় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি বলেন, লঞ্চ-ফেরি এবং বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে গেলে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে সংশ্লিষ্টরা। বাধ্য হয়ে তাদের অনৈতিক দাবি পূরন করতে হয়। না হলে থাকতে দেয় না লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে। তারা কি জানে কত দুর্ভোগ-কষ্ট-যন্ত্রনা সহ্য করে আমাদের থাকা-খাওয়া ব্যবস্থা করতে হয়। একটি বারও কি তারা ভাবে আমাদের মত অবহেলিতদের নিয়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com