ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে ড্রেন। পানি বের হওয়ার কোনো জায়গা নেই। যেকারণে একটু বৃষ্টিতেই রাজবাড়ী বাজারে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়ে ব্যবসায়ী, ক্রেতা বিক্রেতারা। পানি মাড়িয়ে কেনাকাটা করতে হয় তাদের।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে রাজবাড়ী জেলা শহরের বড় বাজার প্রধান সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে। জানা যায় অল্প কিছুক্ষণের জন্য ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় সেখানকার রাস্তাগুলো।
পায়ে হাঁটা মানুষের পাশাপাশি ঝুকিপূর্ণভাবে চলছে ছোটবড় যানবাহনগুলোও। ভারী বৃষ্টিতে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না সে বিষয়ে নজর রেখে চলতে হচ্ছে চালকদের। নজর রেখে ধীর স্থিরভাবে চলতে দেখা গেছে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রোগীবাহী যাববাহন অ্যাম্বুলেন্সগুলোও।
একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে শহরের প্রধান সড়ক ও বড় বাজারের বেশ কয়েকটি জায়গায়। এদের মধ্যে প্রধান সড়কের পাঁচতলা মোড় থেকে কাপড় বাজার মোড় হয়ে মৌচাক মোড় পর্যন্ত, স্টেশন রোড, ফল বাজার পালপট্টি রোড উল্লেখযোগ্য।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে ড্রেনের ব্যবস্থা থাকলেও কখনোই পরিষ্কার করা হয় না ড্রেনগুলো। আবর্জনা ও ধুলা বালি গিয়ে ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ড্রেন দিয়ে যেতে না পেরেই এভাবে পানি জমে থাকে। যদি এই ড্রেনগুলো মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা হতো তাহলে হয়তো এই ধরনের জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি তৈরি হতোই না। এই ড্রেনগুলো বেশ কয়েক মাস যাবত পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি রাজবাড়ী পৌর কর্তৃপক্ষকে।
শহরের প্রধান সড়ক পাঁচ তলার মোড়ের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক বলেন, পানি ফুটপাত ছুই ছুই করছে। একটু বাড়লেই ফুটপাত পার হয়ে দোকানে ঢুকে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এখন একটু গতিতে কোনো গাড়ি চললে সেই ধাক্কায় স্রোতে পানি মাঝে মাঝে গড়িয়ে উঠে আসতে শুরু করেছে। এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মাঝে মাঝেই আমাদেরকে এরকম পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়।
শিক্ষক শেখ ফয়সাল বলেন, আমি শহরের কাজী প্লাজার পাশে এক বাসায় পড়াতে গেছিলাম। তখন হালকা বৃষ্টি ছিল, এই রাস্তায় সামান্য পানি জমে ছিল। পড়ানোর সময় কিছুক্ষণ ভারী হয়। পড়ানো শেষ করে বাইক নিয়ে রাস্তায় উঠলেই সাইলেন্সার পানিতে ডুবে গিয়ে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। পরে অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও আমি আর বাইকটা স্টার্ট করতে পারি নাই। এখন ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নাই।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুর রহমান বলেন, আমি কিছু জরুরি ওষুধ কিনতে এসেছি। কিন্তু এইদিকের রাস্তায় অতিরিক্ত পানি জমে থাকায় কোনো রিকশা এইদিকে আসতে চাইছে না। হেটে আসতে গিয়ে জমে থাকা পানি পেরিয়ে আসতে হয়েছে আমাকে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে চিহ্নিত হলেও এর সে সুবিধা পাচ্ছে না পৌরবাসী। আমরা এখন দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভার বাসিন্দা হিসেবে সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কর দিতে হয়। অথচ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কার্যক্রম যেনো আরও হ্রাস পেয়েছে। রাজবাড়ী শহরে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিল্ডিং গড়ে উঠছে। তবে তার সবই উঠছে পুকুর-খাল ভরাট করে এবং অপরিকল্পিতভাবে। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও পরিকল্পিত না। সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পানি চলাচল করতে পারে না ওই সকল ড্রেন দিয়ে। আবার সেই ড্রেনের পানি বের নিষ্কাশিত হওয়ার জায়গা না থাকায় জমে আছি এই পানি।
রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফকির সাহাদত হোসেন বলেন, রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে জলাবদ্ধতা অন্যতম। তবে এবছর সমস্যাটা ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। শুধু জলাবদ্ধতাই নয়, শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটও ভেঙে আছে, সামান্য বৃষ্টিতে সেই ছোট ছোট গর্তগুলোতেও পানি জমে যায়, গর্তগুলো পানিতে পূর্ণ থাকলে দূর থেকে সেটা না বুঝে সেই গর্তে গাড়ির চাকা পরলে গাড়ি ও যাত্রী উভয়েরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা প্রথম শ্রেণির পৌরসভার বাসিন্দা। অথচ পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও আমরা পানিবন্দি হয়ে পরে আছি। আমরা প্রথম শ্রেণির মতোই বসবাস করতে চাই’। এসময় তিনি অনতিবিলম্বে পৌর এলাকার এসকল সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।
রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএস মো. আলী খান বলেন, ‘রাজবাড়ীর বেশির ভাগ ড্রেনগুলোই অপরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছিল। ড্রেনের পানি ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে যে খালে বা ডোবায় গিয়ে পরে, তেমন অনেক ডোবাও ভরাট হয়ে গেছে। সেকারণে এখন আর পানি বের হতে পারছেনা। যার ফলে এসব জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজবাড়ী পৌরসভার প্রশাসক সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, আমি গত একমাস আগে পৌরসভার দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব পেয়েই বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করছি। ড্রেন পরিষ্কারের কাজও শুরু হয়েছে। আশা রাখছি কিছু দিনের মধ্যেই আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো।