শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১২ অপরাহ্ন

বই হাতে স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে আমারও

শফিকুল ইসলাম শামীম ॥
  • Update Time : সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৫৪ Time View

জিহাদ সরদার। দরিদ্রতার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হইতে না হইতে ঝরে পড়ছে। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে পাঠ্য বই ছেড়ে হকারী করে বই বিক্রি শুরু করছে ১০ বছর বয়সী জিহাদ সরদার। এক বছর যাবৎ রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ-ফেরি ও বিভিন্ন যানবাহনে বই বিক্রি করে সংসারের ঘানি টানছে জিহাদ।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া শহিদ-জাহানারা দম্পতির ছেলে জিহাদ স্থানীয় চাঁনখান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। করোনা কালীন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তেমন স্কুলের যাওয়া হয়নি। স্কুলের খাতায় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র হলেও স্কুলে যাওয়া হয় না। স্কুলের বই বাড়ীতে রেখে নিয়মিত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ-ফেরি এবং বিভিন্ন যানবাহনে বই বিক্রি করে অসুস্থ বাবা-মায়ের সংসার চালাচ্ছেন।

হকারি করে বই বিক্রয়কারী মো. জিহাদ সরদারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। শুরুতে কোন কথার উত্তর দিতে চায়নি জিহাদ। এক পর্যায় বলে, আমারও ইচ্ছা করে বই হাতে নিয়ে সকলের সাথে স্কুলে যাই। কিন্ত ঘরে অসুস্থ বাবা। আমি স্কুলে গেলে সংসার চালাবে কে? বাধ্য হয়ে নিজের সকল ইচ্ছা বির্সজন দিয়ে মহাজনের কাছ থেকে বই এনে বিক্রি করি। জিহাদ বলে বাবা সুস্থ থাকা-কালীন আমি নিয়মিত স্কুলে যেতে পারতাম। বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে পারতাম। বাবার কাছে যা চাইলাম সেটাই এতে দিত। কিন্ত অনেক দিন যাবৎ বাবা রাজমিস্ত্রি কাজ করতে পারে না। মাঝে মধ্যে করলেও নিয়তিম কাজ করতে পারে না। যে কারণে বাধ্য হয়ে আমি বই বিক্রি করি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম জানতে চাইতে কান্না জড়িত কণ্ঠে জিহাদ বলে, স্যারের নাম জানি না। কারণ আমি ওয়ানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকে। শুধু কাগজে-কলমে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ি। কয়েকদিন স্কুলে গেছিলাম। এখন যেতে পারি না। স্কুলে গেলে সংসার চালাবে কে?

প্রতিদিন কত টাকা আয় করে জানতে চাইলে জিহাদ বলে ৩/৪শত টাকা। বৃহস্পতিবার একটু বেশি লাভ হয়। কারণ বৃহস্পতিবার অনেক যাত্রী থাকে। বিক্রিও অনেক ভাল হয়। জিহাদ আরও বলে আমার মত অনেক ছেলে স্কুল ছেড়ে লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে হকারী করছেন। দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে প্রায় শতাধিক ছেলে আছে। অনেকে আমার চেয়ে ছোট আছে।

ঈদের জন্য কোন বিশেষ প্রস্তুতি আছে নাকি জানতে চাইলে জিহাদ বলে, মা-বাবাকে নতুন জামা-কাপড় দিব। সেমাই, চিনি ও গরুর মাংস নিব। তোমার জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনবে না এমন প্রশ্নে জিহাদ হাঁসতে হাঁসতে জানায়, টাকা থাকলে কিনবো, না থাকলে না।

জিহাদের মা জাহানারা বেগম জানান, অভাবী সংসার। যে কারণে সংসার চালাতে শিশু ছেলেকে বই বিক্রি করতে হয়। বড় ছেলে বিয়ে দেওয়ার পর বউ নিয়ে ঢাকায় থাকে। আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। যে কারণে জিহাদ পড়ালেখার পাশাপাশি লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে বই বিক্রি করে। আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগালে হিসেবে কাজ করেন। কিন্ত দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থাকার কারণে নিয়মিত কাজ করতে পারে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com