শারীরিকভাবে অক্ষম হারুন অর রশিদ (৫৬)। তার স্ত্রী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। বয়সের ভারে ও সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। চোখে ঝাপসা দেখেন, এমনকি হাত দুটোতেও তেমন শক্তি পান না। কোন কাজ কর্ম করতে পারেন না। তার পরিবারে তিনটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে একটি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। দুটি মেয়ে নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। হারুন অর রশিদ গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের টেংরাপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে।
তার এই জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করার কথা শুনে তার বাড়িতে গত ২৫ জুলাই ছুটে যান গোয়ালন্দের উৎপাদনমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর পরিচালক মো. সেলিম মুন্সী। তিনি সরজমিনে ওই জরাজীর্ণ ঘর পরিদর্শন করেন এবং ওই পরিবারের সাথে কথা বলে হারুন অর রশিদ কে নতুন ঘর উপহার দেবার আশ্বাস প্রদান করেন। এখন আর বৃষ্টি এলে বা ঝড়ের রাতে পরের ঘরে আশ্রয় নিতে হবে না।
পরে সোমবার দুপুরে সেলিম মুন্সী দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে তার নতুন ঘরের কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। দোয়া পরিচালনা করেন উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি হাফেজ মাওলানা মো. আজম।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন গোয়ালন্দ বাজার বড় মসজিদের ইমাম মো. আবু সাইদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সালাম, পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. লিয়াকত হোসাইন, মো. রাতুল আহম্মেদ প্রমুখ।
হারুন অর রশিদ আবেগঘন কন্ঠে বলছিলেন, ‘‘আমরা কাউকে বলতে পারিনা, আমাগেরে তো কেউ নাই, যে আমাগেরে একখান ঘর করে দেবে, জায়গা আছে খানেক কিন্তু ঘর করার মত টাকা পয়সা আমাগেরে নাই, মেম্বার, ইউপি চেয়ারম্যানকে তো অনেকবার বলেছি আমাগেরে একটা ঘর করে দেওয়ার জন্য। তারা বলেছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা আসলে ঘর করানোর ব্যবস্থা করে দিবে।এখন আর কত দিন গেলে আর কত বয়স হলে আমাগেরে ঘর করে দেবে, আমরা তা বলতে পারিনা। আমাগেরে উপজেলার চেয়ারম্যানের ছাওয়াল আমার বাড়ি এসে ভাঙ্গাচোড়া ঘর দেখে আমার নতুন ঘর করে দিবে সে কথা দিয়া গেছিলো। আজ সে নতুন ঘরের কাজ শুরু করছে। তার এ ঋণ ক্যাবা করে শোধ করবো।
এমন মহতী কাজের ভুসয়ী প্রসংশা করেছেন এলাকার সুধীজন। তারা বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলায় সেলিম মুন্সী একজন দানশীল মানুষ। মহামারি করোনার সময় থেকে শুরু করে সারা বছরই তিনি নিজ অর্থায়নে উপজেলার অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন এবং আছেন। আজ তিনি নিজ অর্থায়নে বৃদ্ধ অসহায় হারুনকে ঘর উপহার দিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনের ভিতর জায়গা করে নিয়েছে। আমরা তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।
মো. সেলিম মুন্সী বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে আমার ভালো লাগে। আর এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার দায়িত্ব। একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি অনেক খুশি। আমি আমার অবস্থান থেকে শুধুমাত্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আল্লাহর রহমতে সমাজের একজন অসহায়কেও যদি ভাল রাখতে পারি এবং সহযোগিতা করতে পারি সেটাই আমাদের বড় পাওয়া। তিনি আরও বলেন, সমাজে যারা বিত্তশালী ব্যাক্তি আছেন তারা যদি আশপাশের অসহায়দের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে তারা অনেক উপকৃত হবে।