২১এপ্রিল, ১৯৭১ ভোর সাড়ে পাঁচটায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, পাকিস্তানের সুসজ্জিত বাহিনী গান বোট, যুদ্ধ জাহাজে চড়ে নদীপথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গোয়ালন্দঘাট দখল নিতে আসে। তখন মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ, ইপিআর, আনসার, ইপিআর কমান্ডার এসডিও শাহ ফরিদ, মুক্তিবাহিনী তৎকালীন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ফকীর আব্দুল জব্বার, সাধারণ সম্পাদক মরহুম কেরামত আলি প্রমানিক এর নেতৃত্বে পাকবাহিনীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে, পাকিস্তানি বাহিনীর সুসজ্জিত অস্ত্রের সামনে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। সন্মুখযুদ্ধ চলা অবস্থাতেই প্রথম শহীদ হন ফকীর মহিউদ্দিন, ছবেদ, হাবিল, কবি তোফাজ্জলসহ আরো কয়েকজন, সেদিন উজানচর বাহাদুরপুর ও গোয়ালন্দ বাজার পাকিস্তানিরা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়, ছাই হয়ে যায় বাহাদুুরপুর ও গোয়ালন্দ বাজার। পাকিস্তানী বাহিনী গুলি করতে করতে বালিয়াডাঙ্গা গিয়ে গণহত্যা শুরু করে, ঘটনাস্থলে স্বপরিবারে শহীদ হন জিন্দার আলি মৃধা, নায়েব আলী বেপারি, মতিয়ারা বেগম, জয়নদ্দীন ফকির, হামেদ আলি, কদম মোল্লা, কানাই শেখ, ফুলবরু, মোলায়েম সরদার, বরুজান বিবি, আমজাদ হোসেন, মাধব বৈরাগী, আহম্মদ আলি মন্ডল, খোদেজা বেগম, করিম মোল্লা, আমোদ আলি শেখ, কুরান সেক, মকসেদ সেক, নিশিকান্ত রায়, মাছেম শেখ, ধলা বেগম, আলেয়া খাতুন, বাহেজ পাগলাসহ নাম না জানা অনেকেই।
নিহত সকল শহীদ এর স্মরণে বাহাদুরপুর গ্রামে গোয়ালন্দ সন্মুখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ স্মৃতি মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য নির্মান কাজ শুরু হলেও তা আজও পর্যন্ত শেষ হয়নি। রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গোয়ালন্দ সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধ স্মৃতি স্তম্ভ তৈরির জন্য দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেন। সেই টাকা দিয়ে গোয়ালন্দ সন্মূখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের কাজ শুরু করেন। অর্থের অভাবে আজও ভাস্কর্যের কাজ এখনো শেষ করা যায়নি।
গোয়ালন্দ সন্মূখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ জুয়েল বাহাদুর বলেন, গোয়ালন্দের মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনার ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এই স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য আমার বাবা বিনামুল্যে ২ শতাংশ জায়গা স্মৃতি স্তম্ভের জন্য দান করেন। কাজটিকে সফল করার জন্য যুদ্ধকালীন সময়ের গোয়ালন্দ মহাকুমার তৎকালীন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী জেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার আমার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে স্মৃতি স্তম্ভ তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে।