ঈদ যাত্রায় স্বস্তি ফেরাতে এবারের যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে ২০টি ফেরি ও ৩৩ টি লঞ্চ চলাচল করবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। সেইসাথে ঘাটকে যানজট মুক্ত রাখতে ঈদের আগে ও পরের তিন দিন ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পরিবার পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষ যাতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য নানান উদ্যোগ নিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। যাত্রা পথে ভোগান্তি, যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সড়কে যানজট নিরসন সহ ঘাট এলাকায় সার্বক্ষণিক কঠোর নজরদারি করবে প্রশাসন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পূর্বে যাত্রী ও যানবাহনের ভোগান্তির অন্যতম নৌপথ ছিল দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এ রুটে ওই সময় ৩০ মিনিটে পদ্মা পাড়ি দিতে ঘাটে আসা যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহনকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ফেরির জন্য। পদ্মা সেতু চালু হবার সুফলে ফেরির জন্যে এখন আর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় না। সেইসাথে কমেছে ভোগান্তি, স্বস্তি ফিরেছে ঘাট দিয়ে চলাচলকারি যানবাহন ও যাত্রীদের মাঝে।
যাত্রী ও চালকরা জানান, পুর্বে এ রুটে যাতায়াত করতে দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন স্বল্প সময়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী ছুটলেও যানবাহন ও যাত্রীদের যানজটে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
বিআইডব্লিউটিএ’র দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আফতাব হোসেন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের জন্য এবারের ঈদে ৩৩টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি লঞ্চ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল করবে। ঈদের আগে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে। তবে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা মেনেই পারাপার করা হবে।
আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঈদের দিনসহ আগে-পরের ৩ দিন করে মোট ৭ দিন ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টা টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জে এম সিরাজুল কবির বলেন, পবিত্র ঈদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীতেও থাকবে নৌ পুলিশের টহল। লঞ্চে ও ফেরিতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিতে দেওয়া হবে না। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এখন ১২ থেকে ১৪ টি ফেরি চলাচল করলেও পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে ছোট বড় ২০ টি ফেরি চলাচল করবে। আশা করি যানজট মুক্ত যানবাহন ও ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘে বাড়িতে পৌঁছাতে পারবে।
ঈদের সময় যানবাহনের চাপ বাড়লেও কোনো দুর্ভোগ হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বর্তমান তিনটি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তিনটি ঘাটে রয়েছে ছয়টি পকেট। এই ছয় পকেটে ছয়টি ফেরি ভিড়তে পারবে। তবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকার কারণে এ রুটে মোটরসাইকেলের বাড়তি চাপ হতে পারে। আশাকরি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এবারের ঈদ যাত্রা হবে সকলের জন্য স্বস্তির যাত্রা।
এদিকে সড়ক ও নৌপথে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. মোরশেদা খাতুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সোহাগ হোসেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মো. আলমগীর শেখ তিতু, গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মন্ডল, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল প্রমুখ।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার-ভিডিপি’র প্রতিনিধি গণসহ, রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপসহ বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।