একুশ আসছে
মা বসে ভাবছে
আমার খোকা, আমার সালাম
২১ আসে বারবার
ভাবনার ঘোর কাটে।
ধীর পায়ে এগিয়ে যায় মা আমার
টিনের বাক্সটার কাছে।
মা ঘুমের ঘোরেও একবার হাতিয়ে
নেয় বাক্সটা আছে কি?
ওর মধ্যে আছে আমার ভাইয়ের রক্ত ভেজা শার্ট।
মায়ের হৃদয় নিংড়ানো আকুতি।
মায়ের আমার যান্ত্রিক জীবন
তাঁর একাকিত্বে, নির্জনে নিরলস ভাবনায়
শুধুই এ বাক্সটা।
যার মধ্যে রয়েছে রক্তে ভেজা শার্ট
বাক্সটার পরশ নেওয়ার ফুরসত
দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে আমার মায়ের
ঘোলা হচ্ছে তৃষিত দু’নয়ন
নুইয়ে পড়েছে বিবশ শরীর
পিছনের স্মৃতিগুলো মিলিয়ে গেছে
অবারিত শস্য ক্ষেতের আবছা আলোয়
চাঁদ আড়াল হতেই ঘন অন্ধকার চারিধার।
বাক্সর ঘট্ ঘট্ আওয়াজ আর শোনা যায় নাই।
বিবশ দেহ মন
খসে পড়া শাড়ির আঁচল
সবই স্মৃতি।
মায়ের মুখের সোনা গল্প
ও তাঁর প্রাণের আকুতি।
সিদেল চোর বাক্সটা চুরি করেছে
মা দৌড়িয়েছে পিছু পিছু
বুকফাটা আর্তনাদ
চোর, চোর, চোর।
শুনল পৃথিবী শুনল মহাকাশ
চোর, চোর, চোর।
মা দৌড়িয়েছে যতক্ষণ না তালার ঢকর ঢকর
শব্দ মায়ের পথ চলতে সাহায্য করেছে।
অবশেষে –
রিক্ত মনে ফিরে এসেছে নিজ আলয়ে।
প্রভাত ফেরীতে গান ভেসে আসে
একুশ আবার আসল ফিরে বাংলার ঘরে ঘরে
আমার মায়ের মুখের হাসি আসল না যে ফিরে
মায়ের চোখে শ্রাবণের ধারা
মা, মা, মা তুমি আর কেঁদো না
মা দৌড়িয়ে
খোলা জানালায় দাঁড়ায়।
ঐ তো রক্তের গন্ধ,
মা গন্ধ পায়
রক্তে ভেজা শার্টের গন্ধ।
বাতাসে খোলা আকাশে রক্তের গন্ধ।
ঘোলা চোখ নুইয়ে পড়া শরীর
উজ্জীবিত হয়।
একুশ আসবে বারবার
বাংলার ঘরে ঘরে।