বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

৫১ তম মহান বিজয় দিবসে আমার ভাবনা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৯৭ Time View

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫১ তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আমার ভাবনা থেকে, মনের তাগিদে, বিবেকের তাড়নায় সামাজিক কর্তব্যের তাগিদ থেকে একটা বিষয় আনতে চাই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই, কিন্তু দেশে স্কুল কলেজসহ সকল ধরনের সরকারি বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের গড় অনুপস্থিতি ভয়াবহ উদ্বেগজনক। বিষয়টি লিখছি এই জন্য যে আমিও একজন শিক্ষক। বিবেক আমাকে তাড়িত করে। তাই বিষয়টি লিখছি এই জন্য যে সমাজের বিবেকবান মানুষ যেন বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যাতে সামাজিক চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ  হয়।

এক কালের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত আমাদের গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষনীয় বিদ্যাপীঠ। বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে অনেক শিক্ষক আর দেশে ফিরে আসেননি। অথবা বিনা বেতনে বিদেশে অবস্থান তার সংখ্যাও কম নয়। এছাড়াও মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষকদের উপস্থিতিও ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক।

আমাদের কথা বলি, আমার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে কলেজটিকে আমি এখনও অনেক ভালবাসি। যার নাম “রাজবাড়ী সরকারি কলেজ”। কলেজের শিক্ষা ঘন্টা শেষ হওয়ার আগেই অনেক কলেজে কোন শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী থাকে না। কলেজের মধ্যের দিগন্ত ফাকা হয়ে যায়। এদিকে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। রাজবাড়ীর সরকারি স্কুলগুলোতেও শিক্ষকের স্বল্পতা দেখিয়ে অধিকাংশ ক্লাস হয় না। আমার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গুলির অন্যতম গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি সরকারী বালিকা বিদ্যালয়েও বর্তমানে একই অবস্থা। বেসরকারী থাকা অবস্থার চেয়ে প্রানচঞ্চলতা কমে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা Learning genaration Intening In Education For The Changing World তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ স্কুলের শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকে। ইহাতে ২০ শতাংশ শিক্ষা ঘন্টা নষ্ট হয়। বছরে ক্ষতি হয় দেশের ৯০০ কোটি টাকা। ভারত, পাকিস্থান ও বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ১৭টি দেশে জড়িপ চালিয়ে গবেষনার মাধ্যমে এই তথ্য পাওয়া গেছে। আবার ইউনেস্কো প্রকাশিত এশিয়া Pacsific Regional Education For All (PREFA) প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপস্থিতিও হতাশাজনক।

শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের চাইতে অন্যান্য সরকারি কাজে শিক্ষকবৃন্দ ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্কুলগুলির ম্যানেজিং কমিটি সদস্যবৃন্দ স্কুলে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করেন না। ছাত্র-ছাত্রীদের ঝড়েপড়া রোধ করার লক্ষ্যে তাদের অভিভাবকদের এবং ম্যানেজিং কমিটির সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অতিব প্রয়োজন। সেই সাথে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার জন্য শিক্ষকবৃন্দদের সরকারি অনেক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও স্কুলের পরিবেশ, অবস্থান, খেলাধুলার মাঠ এবং ভাল বিনোদনের ব্যবস্থা করে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের আওতায় আনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে।

আমি লেখক নই বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে একজন শিক্ষক ছিলাম এবং এই কাজ থেকে নিবৃত হই নাই। আমি ভাবি আমার ২য় ও ৩য় প্রজন্ম নিয়ে। তাদের কিছুই দিতে না পারার মানসিক যন্ত্রনা সার্বক্ষনিক আমাকে তাড়া করে। ক্লাসের বই অনুসরণ না করে গাইড বই ব্যবহারের পরিণতি হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হওয়া। এর কারণ প্রাইভেট পড়ার উপর নির্ভর করে নিজের সৃজনশীলতা দক্ষতা ও মেধা সৃষ্টির ক্ষমতা হারাচ্ছে। এই জন্য কি শুধু শিশুরাই দায়ী না অভিভাবকগণও ? কারণ শিশুর সামনে মা-বাবা টাকা দিয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে। এতে শিশুটির মানসিক প্রতিক্রিয়া কি হচ্ছে ? জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “তোমাদের কলম হোক শোষণ মুক্তির হাতিয়ার” বর্তমানে শিক্ষার মান দৃশ্যতসহ সংখ্যাও বাড়ার প্রয়োজন।

চিন্তাবিদ ফুনফুশিয়াস এর মতে “যদি তুমি এক বছরের পরিকল্পনা মতে ফল পেতে চাও তবে শস্য রোপন কর। যদি ১০ বছরের পরিকল্পনার ফল পেতে চাও তবে বৃক্ষরোপন কর। আর যদি সারা জীবনের জন্য ফল পেতে চাও তবে সন্তানদের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা কর”। ভবিষ্যৎ শিশুদের সু-নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সরকার কর্তৃক প্রেরিত চিঠিপত্রে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রবর্তন করার জন্য মনোনিবেশ করেছে। National Integrity Strategy Of Bangladesh প্রচার ও প্রসার করার কাজে হাত দিয়েছে। আমরা যারা উন্নয়নকর্মী গ্রামে গঞ্জে সাধারণ মানুষের সার্বিক উন্নয়নকল্পে কাজ করি, বিশেষ করে নারী সমাজকে সচেতন করে তাদের অধিকার ও করণীয় ও কর্তব্য কি কি তাহা চিহ্নিত করার ফলে বর্তমান সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নিত করেছে। সেই সঙ্গে সংসদে সংরক্ষিত আসন ৪৫-৫০ জনে বৃদ্ধি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের নারীরা প্রশাসন পদে  সবোচ্চ পর্যায়ে আছে।

আমাদের ডিসি, এসপি, ইউএনও সহ শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন সময়ে নারীর ক্ষমতায়ন চোখে পড়ার মত। ১৪ হাজার নারী বর্তমানে সারা বাংলাদেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আর জেন্ডার বাজেটও করা হয়েছে ৩০টি মন্ত্রণালয়ে। আমারা আশাবাদি যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিকশিত নির্যাস চিরস্থায়ী হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন সায়াহ্নে সামাজিক ও আর্থিক সম্পদপূর্ণ করার লক্ষ্যে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য করার প্রয়াস নিশ্চিত করেছেন। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধের ২য় ও ৩য় প্রজন্মেও শিক্ষা সহ নানাবিধ চাকুরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতসহ গ্রাম অঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। মায়ানমারের সাথে সমুদ্র জয় করে বঙ্গোপসাগরে ১,১১,৬৩১ বর্গ কি: মি: জায়গা বাংলাদেশে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে “এজেন্ট অব চেঞ্জ আওয়ার্ড পার্লামেন্ট ৫০-৫০” চ্যাম্পিয়্যানসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে বহু সম্মাননায় সম্মানিত হয়েছে বাংলাদেশ, সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের দেশটি দূর্যোগ প্রবন। প্রতি বছর এদেশের কৃষক দিনমজুর সহ গরিব ও সাধারণ মানুষের জীবনে বন্যা অভিশাপ বয়ে আনে। মনে পড়ে ভোলায় ১৯৭০ সালের বন্যা ও জলোচ্ছাসের কথা। বেশ কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল। বর্তমানে যে দূর্যোগ মোকাবেলা করা হচ্ছে তাতে বিশ্বের মধ্যে এগিয়ে আছে। এ কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “চ্যাম্পিয়ন অফ দি আর্থ” পুরস্কার পেয়েছেন। এটা এ জাতির জন্য গর্বের বিষয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা দূর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করলেও অনেক ক্ষেত্রে তার বাস্তব প্রতিফলন হয়নি। সচেতনতার সাথে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করে যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার দেশে সোনার বাংলা গড়ার। আমি বিশ^াস করি একদিন এদেশে সোনার মানুষ তৈরী হবে আর সেসব সোনার মানুষ সোনার দেশ গড়ে তুলবে।

দেশে যুব সমাজের অবক্ষয়ের জন্য তাদের দোষী করতে আমি সম্মত নই। আসুন অভিভাবকগণ, আমরা ওদের ভালবাসি, ওদের সময় দিই, দেই দেশপ্রেম ভালাবাসা। স্বাধীনতার যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাথা গল্প শোনাই-সার্বিক মুক্তির গান শোনাই। এ প্রজন্মের সমস্যা শুনি বন্ধু বেশে। ব্যক্তি জীবনে আমি এগুলি লালন পালন ও ধারন করি। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করি। আমি অনেক এলোমেলো স্বপ্ন দেখি। এ প্রজন্মকে ভাল স্বপ্ন দেখাই। যে স্বপ্ন সূর্যালোকের মত তবে এ স্বপ্ন ঘুমিয়ে না সচেতন জায়গা থেকে দেখি-যা বলেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম। এদেশের দারিদ্র দূরীকরণে সমাজের যে বৈষম্য দূর্নীতি অন্যায্যতা, সামাজিক, অন্যায় অবিচার, যে সব কারণে বেকারত্ব বাড়ছে। দেশের যুব সমাজ আজ হতাশ হয়ে বিপথে যাচ্ছে, তথা কথিত জঙ্গিবাদে ঝুকে পড়ছে। আসক্ত অবস্থায় মানুষ খুন করছে।

শেষ করার আগে সামনের দিকে যাওয়া আমাদের দেশ বাংলাদেশ। বর্তমানে সারা দুনিয়ার কাছে মাইল ফলক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুধু একটি দলেরই নেতা নন। তিনি সারা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের অভিভাবক ও বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা সারা বিশ্বে অনন্য রূপায়নে কাজের জন্য সমাদৃত হয়েছেন। এ লেখাটির ভুলক্রুটি সবই আমার অদক্ষতা, আর সফলতা ………… আপনাদের। আসুন, আমরা সকল প্রকার সামাজিক অবক্ষয়, ঘুষ আর সকল পর্যায়ের দূর্নীতি নির্মূল করে জাতির জনকের স্বপ্ন-সাধ পূরণ করে দুঃখী মানুষের মূখে হাসি ফুটাই। সেইসাথে বঙ্গবন্ধু কন্যার ২০০৮ সালের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপ যেমন আজ বাস্তব, তেমনিভাবে বিশ^দরবারে বাংলাদেশের নতুন পরিচয়ের স্বপ্ন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ প্রতিষ্ঠিত করি।আসুন আমরা সবাই স্বাধিনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : সহসভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজবাড়ী জেলা।

সাবেক চেয়ারম্যান, রাজবাড়ী জেলা পরিষদ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com