ফেরি ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত। ১৮ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে বাস্তবায়ন করা শুরু হবে। এর পূর্বে গত ১৯ জুন থেকে ফেরি ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। এনিয়ে দুই মাসে ৪০ শতাংশ ফেরি ভাড়া বৃদ্ধি করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুন থেকে ২০ শতাংশ ফেরি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। দুই মাস না যেতে পুনরায় জ্বালানী তেলের মূল্যে বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও ১৮ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ফেরি ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। এই নিয়ে দুই দফায় ৪০শতাংশ ফেরি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের উভয় পারের ফেরি ঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে ঘাট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৬ জুন থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৪০ শতাংশ যানবাহন নদী পারাপার কমে গেছে। যে যানবাহনগুলো সহজে পারাপার হওয়ার জন্য পদ্মা সেতু ব্যবহার করছে। ফেরি ভাড়া পুনরায় বৃদ্ধি করায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন নদী পারাপারের সংখ্যা আরোও কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বেনাপোল থেকে গাজীপুরগামী পন্যবাহী ট্রাক চালক লিটন মোল্লা জানান, দফায় দফায় ফেরি ভাড়া বৃদ্ধি। তেলে মূল্যে বৃদ্ধি। তাহলে আমরা কি নিয়ে বাড়ী যাবো। এদিকে বাজারে প্রতিটি পূন্যের মূল্যে কয়েকগুন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে আয় কমেছে, অন্যদিকে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসময় পাশে থাকা দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট পল্টুনে দাঁড়িয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফেরি ষ্টাফ বলেন, যে ভাবে প্রতিটি জিনিসের মূল্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চললে কেউ খেয়ে মরবে আবার কেউ না খেয়ে মরবে। দুই মাসে দুইবার ফেরি ভাড়া বৃদ্ধি করায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যানবাহনের অভাবে ফেরি গুলো খালি ছেড়ে যেতে হয়।
রাজবাড়ী থেকে যাত্রীবাহী বাস রাবেয়া পরিবহনে ঢাকাগামী শ্যামল বিশ্বাস নামের এক যাত্রী বলেন, ব্যবসায়ী প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা যেতে হয়। কিন্ত প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। দফায় দফায় জ্বালানী তেলের মূল্যে বৃদ্ধি পাওয়ায় যানবাহনের ভাড়াও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে করবো কিভাবে। তিনি আরোও বলেন, ঢাকা থেকে ট্রাকে যে মাল রাজবাড়ীতে আনতে খরচ হতো। ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ায় এখন দ্বিগুন লাগে।
যুশোর থেকে যাত্রীবাহী বাস ঈগল পরিবহনের যাত্রী মনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও কোন দুর্ভোগ নেই। তবে অতিরিক্ত ভাড়ায় আমাদের মত সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী এক যাত্রীবাহী পরিবহন চালক বলেন, পদ্মা সেতু শুরু হওয়া পর থেকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে আর কোন দুর্ভোগ নেই। তবে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে পরিবহন ব্যবসায়ীদের প্রতি টিপে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোরো ফেরি (বড়) এক মাস্টার বলেন, ফেরির ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক চালক এই নৌরুটে আসবে না। এতে ভাড়া বেশি হলেও যানবাহন শূন্যে ঘাট থেকে ফেরিগুলো ছেড়ে যেতে হবে। এতে ফেরিগুলোর আরো লোকসান হবে। যাত্রী ও চালকদেরও দুর্ভোগ হবে।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা বন্দরের উপপরিচালক শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমান যানবাহন ও যাত্রী নদী পারাপারে কোন প্রকার দুর্ভোগ নেই। ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যে বৃদ্ধি পাওয়া ফেরি ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয়েছে।