বিদ্যুৎ আসে। বিদ্যুৎ যায়। বিদ্যুৎ যাওয়ার নিশ্চিয়তা আছে। তবে ফিরে আসার কোন নিশ্চয়তা নেই। কথাগুলো বললেন জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ব্যবসায়ী রাম ভৌমিক। তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে প্রতিটি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ দেখা মেলে না। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব হয় না। বিদ্যুৎ এর বিকল্প আলো হারিকেনও জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না।
আমার পরিবারের মাসিক আয় ৬হাজার টাকা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫জন। ২টি সন্তান স্কুলে পড়া লেখা করে। ঘরে অসুস্থ শাশুরী। মাত্র ১জনের আয়ের ৬হাজার টাকার উপর পরিবারের চিকিৎসা,সন্তানের লেখা-পড়াসহ সকল প্রকার ব্যয়। এই অল্প আয়ের উপর কোন রকম জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। অসুস্থ শাশুরী ও দুই সন্তানের চাহিদা মত ভাল কিছু রান্না করে খাওয়াতে পারি না। এখন হঠাৎ প্রতিটি জিনিসের মূল্যে দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এই অল্প আয় দিয়ে কিভাবে চলবো।
প্রশ্ন করতেই ভারাক্রান্ত ভাষায় কথাগুলো বলেন, ৩৫বছর বয়সী ডলি বেগম নামের এক নারী। তিনি বলেন, প্রয়োজনের সময় কারেন্ট থাকে না। যে কারণে ফেলে আসা দিনগুলো কথা মনে করে হারিকেন জ্বালানো শুরু করি। গত রাত থেকে সে ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেল। কারণ ১১৪টাকা লিটার কেরোসিন ক্রয় করার মতো সামর্থ নেই আমার পরিবারের।
পাংশা উপজেলায় মধ্য বয়স্ক রাবেয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, কারেন্ট না থাকলে হারিকেনও জ্বালানোর ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেল। কারণ খরচ যদি সামর্থের বাইরে চলে যায় তাহলে করবো কিভাবে। ১১৪ টাকা লিটার কেরোসিন ক্রয় করার সামর্থ কয়জনের আছে। আয় বৃদ্ধি পায়নি। তবে পরিবারের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুন। এভাবে চললে না খেয়ে মরা ছাড়া কোন উপায় নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বেসরকারী স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, লজ্জায় কারো কাছে বলতেও পারি না। চলতেও পারি না। যে হারে জ্বালানী তেলের মূল্যে বৃদ্ধি পেল এতে ঘরের আলো দূরের কথা, পেটের খাবার জোগানে অসম্ভব।
রাম ভৌমিক, ডলি বেগম, রাবেয়া বেগম এর মতো অনেকে ঘরের মধ্যে ডুমরে, ডুমরে কঁদছেন। ঘরের বাহিরে গিয়ে বলতে পারছেন না। টাকার অভাবে বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে, হারিকেন জ্বালাতে হয়। তেলের মূল্যে বৃদ্ধি পাওয়ায় হারিকেন জ্বালানোও সম্ভব হচ্ছে না অনেক পরিবারের। রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে অনেকের সাথে কথা বলে এমনি চিত্র দেখা যায়।
কেরোসিন, ডিজেল, পেট্টোল ও অকটেনের মূল্যে হঠাৎ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশায় সময় কাটছে রাজবাড়ী জেলার নি¤œ ও মধ্যবৃত্ত আয়ের সাধারণ মানুষ। আশংকায় রয়েছে সাধারণ কৃষক। কারণ জ্বালানী তেলের মূল্যে বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনের খরচও দ্বিগুন হয়ে যাবে।