রাজবাড়ীতে শহর রক্ষা বাধ এড়িয়ার মধ্যে অবস্থিত খাল, বিল ও পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না থাকায় চাষীদের পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। ছোট ছোট পুকুরের অল্প পানিতে পচাতে গিয়ে পাটের উজ্জল কালার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে পাটের মূল্য যেমন কম পাচ্ছে সাধারণ কৃষক, সেই রুপ উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। এতে চাষীদের অর্থনৈতিক ভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা ৫টি উপজেলা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এবং পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার বৃষ্টি কম, বর্ষার পানিও এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে পাট কাঁটা বা পচানোর সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অনেক চাষীদের পাট ক্ষেতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ পাট কাটলেও পচানোর পর্যপ্ত পরিমাণ পানি পাচ্ছে না। এদিকে আশ-পাশের খাল-বিল, পুকুরে অল্প পানিতে পাট পচানোর চেষ্টা করলেও কালার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক চাষী বিকল্প হিসেবে ১৫/২০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে নদী পারে পচানোর চেষ্টা করছে। এতে চাষীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় ৩ লাখ, ৭৪ হাজার ১১৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সেই হিসেবে রাজবাড়ীতে এবার ৩৭লাখ ৪১হাজার ১৫০ মণ পাট উৎপাদন হবে রাজবাড়ী জেলায়। জেলার একাধিক পাট চাষী ও কৃষি অফিসের মাঠ কর্মীদের ধারনা পাট পচানোর জন্য পর্যপ্ত পরিমাণ পানি না থাকায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন কম হবে। এবং পাটের কালার নষ্ট হওয়ায় মূল্যেও কম পাওয়া যাবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার পাট চাষী নজরুল ইসলাম জানান, আমরা আদি কৃষক। প্রতিবছর ৭/৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করি। এবারও ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট ভাল হয়েছে তবে আশ-পাশে পাট পচানোর জন্য পানি না থাকায় শুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সময় মত পাট পচাতে না পারলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিতে পচানোর ব্যবস্থা না করতে পারলে উৎপাদনও কম হবে। পাটের কালার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মূল্যেও কম পাওয়া যাবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার কৃষি অফিসার মো. বাহাউদ্দিন শেখ জানান, প্রতিবছরের ন্যায় জেলায় এবারও পাটের উৎপাদন ভাল হয়েছে। তবে বৃষ্টি কম থাকা এবং বর্ষার পানি না থাকায় উৎপাদিত পাট সঠিক সময় পচানো যাচ্ছে না। এতে উৎপাদিত পাট থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাবে। এবং পাটের সঠিক কালার না থাকায় মূল্যেও কম পাওয়া যাবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পাট চাষী মনোয়ার হোসেন বলেন, পাট ভাল হয়েছে তবে পচাতে পারছি না। সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক পাট কাঁটতে পারছে না পচানোর ভয়ে। আবার ডুবা-নালা, খাল-বিলে অল্প পানিতে পাট পচানোর ব্যবস্থা করায় কালার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পানি অভাবের কারণে এবার সাধারণ পাট চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পাট চাষী আব্দুর কাদের বলেন, পাট ভালো হয়েছে, তবে চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ উৎপাদিত পাট সঠিক সময় পচাতে না পারলে ৩০শতাংশ পাট নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পাট পচানোর জন্যে বেরি বাধের সুইজ গেট গুলো দেওয়ার প্রয়োজন। তাহলে পাটের কালারও ভাল হবে মূল্যেও বেশি হবে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এসএম সহীদ নূর জানান, পাট উৎপাদন করতে পেরে যেমন কৃষক খুশি হয়েছে, ঠিক পানি না থাকায় সাথারণ পাট চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না থাকলে পাট পচানোর ব্যবস্থা করলে উৎপাদন কম হয় এবং পাটের কালার নষ্ট হয়।