কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) এর বাস্তবায়নে এবং দি ফ্রিডম ফান্ড’র আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় এনহানচিং প্রটেকশন অফ চাইল্ড সেক্স ট্রাফিকিং সারভাইভস ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় কেকেএস’র প্রধান কার্যালয়ে শনিবার সরকারি ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও তাদের মায়েদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিতকরণে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের জন্ম নিবন্ধন ফি ও বিলম্ব ফি মওকুফ করা, দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার শিশু ও মায়েদের জন্য ভ্রাম্যমান জন্ম নিবন্ধন ইউনিট স্থাপন করা এবং যে সকল শিশু ও মায়ের জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য নাই তাদের জন্য বিকল্প পন্থার ব্যবস্থা করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব, ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। সভায় সভাপতিত্ব করেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান।
প্রধান অতিথি বলেন, মা যে তথ্য দেবে সেই তথ্যের উপরই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। তিনি বলেন আলোচনা থেকে জানতে পারলাম ১১৩ জন মা এবং ৯ জন শিশুর জন্ম নিবন্ধনের কোন তথ্য নাই। আমি দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে নির্দেশনা দিচ্ছি গোয়ালান্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে কেকেএস কর্তৃক প্রেরিত ২১৩ জন মা এবং ৯ জন শিশুর জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করবেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের জন্ম নিবন্ধনের বড় জটিলতা হলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। সকলকে মাথায় রাখতে হবে কোন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি যেন এর মধ্যে না আসে। যদি কোন মা সঠিক বাবার তথ্য না দিতে পারে সেক্ষেত্রে মা যেই পরিচয় দেবে সেই নামেই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিবিসিপিসি কমিটির সম্পাদক ও কেকেএস মিডিয়া এ্যাডভোকেসি গ্রুপের সদস্য শেখ রাজিব জানান জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে অতীতের সমস্যাসমূহ নিরসন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি সেই সাথে যুগ্ম সচিবসহ সকলের একযোগে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, বেদেরা যে জায়গার ঠিকানা দিবে সেই ঠিকানার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে তার হার্ড কপি সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া তিনি কেকেএস স্টাফদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ওটিপি ঠিক করে দেওয়ার পরামর্শ দেন, ফি মওকুফের আবেদন যুগ্ম সচিব বরাবর প্রেরণ করলে আমি তা মওকুফ করার ব্যবস্থা করে দেব। এছাড়া কেকেএস এর প্যাডে শিশু ও তার মায়েদের তথ্য প্রদানের জন্য বলেন এবং ইউপি সচিব তার আলোকে জম্ম নিবন্ধন প্রদানের ব্যবস্থা করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য ভ্রাম্যমান জন্ম নিবন্ধন ইউনিট স্থাপন ও প্রয়োজনীয় জনবল প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন। উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার মহোদয়ের প্রতিনিধি সাদ আহম্মেদ সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বলেন সভায় আলোচিত বিষয়সমূহ রাজবাড়ী জেলার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে অবহিত করবো এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের সুপারিশ করবো।
কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) এর নির্বাহী পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার বলেন, আমি আজ খুব আনন্দিত যে এই শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করতে পারবো। এই জন্য কেকেএস এর পক্ষ থেকে যুগ্নসচিব মহোদয়সহ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ এবং আমি মনে করি সভায় সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে শিশু ও তাদের মায়েদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা নিরসন হবে।
রাজবাড়ী জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস বলেন, কোন শিশুরই জন্ম নিবন্ধনের বাইরে রাখবেন না। তিনি বিভিন্ন সরকারি সামাজিক সুরক্ষা সেবার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি এই সভার মাধ্যমে ব্রোথেল এবং বেদে জনগোষ্ঠির জন্ম নিবন্ধনের সমস্যার কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে অবগত হয়েছেন মর্মে জানান। চার বছর বয়সের উপরের শিশুরা যৌনপল্লিতে থাকার কোন নিয়ম নাই এবং সরকারীভাবে দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার পাশে কোন শিশু রাখার ব্যবস্থা করা যায় কিনা মর্মে যুগ্ন সচিবকে জানান।
যৌনপল্লীর এক মা বলেন, তার শিশুর কোন তথ্য ছিল না। তিনি বলেন আমি আমার শিশুর বাবার তথ্য দিতে না পরায় কেউ সহযোগিতা করে নাই।
সভায় আরোও উপস্থিত ছিলেন দি ফ্রিডম ফান্ড-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ খালেদা আক্তার শান্তা, প্রোগ্রাম এ্যাডভাইজার সুমনা চৌধুরী, আতাউর রহমান ইউডিএফ কালুখালী, পাংশা, মো. নাজিউর রহমান, ইউডিএফ, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, কেকেএস এর সহকারী নির্বাহী পরিচালক ফকীর জাহিদুল ইসলাম, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার মা এবং শিশুসহ কেকেএস-এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ প্রমুখ।