উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক বাংলায় মীর মশাররফ হোসেন প্রথম সার্থক বাঙালি মুসলিম গদ্য শিল্পী। তাঁর রচনার শিল্পীত চোখে দৃশ্যমান হয়েছে ঔপনিবেশিক বঙ্গীয় সমাজ জীবনালেখ্য। বঙ্কিম প্রভাবিত গদ্য শৈলীর সমসাময়িক ভাষা ব্যবহারে তিনি প্রাঞ্জল ও সাবলীল সাহিত্যকীর্তি উপহার দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র ব্রিটিশ শাসনামলে বঙ্গীয় মুসলমানরা যখন বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় পশ্চাদপদ ও অনগ্রসর ছিল ঠিক তখনই সেই ঘুমন্ত বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষা দীক্ষা সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুশীলনে উৎসাহিত ও অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য মীর মশাররফ হোসেন জ্ঞানের আলোকবর্তিকা প্রজ্জ্বলিত এবং লেখনি ধারণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং বাংলা সাহিত্যের ঊষালগ্নের দীপ্তিমান মুসলিম সাহিত্যিক এবং সব্যসাচী লেখক। বাংলা সাহিত্যের সকল শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। বিশুদ্ধ সংস্কৃতি ঘেষা বাংলা শব্দ ব্যবহারে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তাঁর সাহিত্যের ভাষা ছিল প্রাঞ্জল ও সুখপাঠ্য। তিনি ছিলেন অনগ্রসর বঙ্গীয় মুসলমানদের পথপ্রদর্শক ও আলোর দিশারী। মীর মশাররফ হোসেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করে তৎকালীন হিন্দু লেখক ও পন্ডিতদের অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন।
মীর মশাররফ হোসেনের প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম ‘গোলাপ’ এই কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায়। কবিতাটি পাঠক মহলে বিশেষ ভাবে সমাদৃত হলে পাঠকের চাহিদাপূরণের জন্য ‘সংবাদ প্রভাকর’ অতিরিক্ত ৩০০ কপি পুনরায় মুদ্রিত হয়।
মীর মশাররফ হোসেন রচিত বেদনা বিঁধুর করুন রসে সিক্ত কালজয়ী উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু (১৮৮৫) আজও বাংলার ঘরে ঘরে সুপাঠ্য গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত। বিষাদময় কারবালা ট্রাজেডিকে উপজীব্য করে তিনি তাঁর অমর গ্রন্থ বিষাদ সিন্ধু রচনা করেন। তিনি বিষাদ সিন্ধুকে তিনটি পর্বে লিপিবদ্ধ করেন ১. মহররম পর্ব ২. উদ্ধার পর্ব ৩. এজিদ বধ পর্ব। বিষাদ সিন্ধু প্রকাশিত হলে গ্রামীণ সাংবাদিকতার জনক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার তাঁর ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকায় এক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। তিনি লেখেন মুসলমানদের গ্রন্থ বিশুদ্ধ বঙ্গভাষায় লিখিত ও প্রকাশিত হয়েছে। সেই সকল গ্রন্থ যে বঙ্গভাষা বিস্মৃতির আর একটি নতুন পথ এবং মাতৃভাষা বাঙ্গালার প্রতি মুসলমানদের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করছে। যা চিন্তাশীল পাঠক সমাজ সহজেই অনুধাবন করতে পারে। তাই বিষাদ সিন্ধুকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদীগ্রন্থ বলা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গদ্য শাখায় উপন্যাস কিংবা নাটক রচনায় মুসলমান সাহিত্যিকের মধ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কেউ ছিলনা। মীর মোশাররফ হোসেনের আবির্ভাব লগ্নে বাঙালি সমাজ ছিল আধুনিক শিক্ষা ধারার বাইরে। তিনি প্রতিকুল পারিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে গড়ে উঠলেও পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের উদার চিন্তাভাবনার কারণে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় সাহিত্যের পাঠ নিয়েছিলেন। শিক্ষা জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা মননে ধারন করেছেন এবং এগিয়ে গেছেন দীর্ঘ পথ। পুঁথিসাহিত্যে মধ্যযুগের সাহিত্যরীতি তাঁর মননশীলতা যেমন প্রভাবিত করেছে তেমনি আধুনিক যুগের পদধ্বনি তার চেতনায় অনুরণিত হয়েছে।
মীর মোশাররফ হোসেন কুষ্টিয়া (তৎকালীন নদীয়া) জেলার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গড়াই নদীর তীরবর্তী লাহিনীপাড়া গ্রামে মাতামহ মুন্সী জিনাতুল্লার বাড়ীতে বিবি দৌলতননেসার গর্ভে ১৩ই নভেম্বর ১৮৪৭ সালে (বাংলা ২৮ কাত্তিক ১২৫৪) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাতা দৌলতননেসার চার পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বজ্যেষ্ঠ্য।
অন্যান্য ভাই-বোনদের নাম যথাক্রমে শামসুন্নেসা, মোহতেশাম, স্বল্পায়ু এক বোন, মীর মোবারক হোসেন, মীর বজলাল হোসেন, তাঁর অধিকাংশ ভাই-বোনেরই অকাল মৃত্যু ঘটে। এদের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন ও মীর মোকাররম হোসেন দীর্ঘায়ু পেয়েছিলেন। মীর মোহতেশাম হোসেন আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন । তিনি বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এই ভাইয়ের সাথেই মীর মোশারফ হোসেনের আন্তরিক হৃদ্যতার সম্পর্ক আমৃত্যু বজায় ছিল।
পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন জমিদার। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলাধীন পদমদী গ্রামে তাঁর পৈত্রিক নিবাস। মীর মোশারফ হোসেনের মা দৌলতননেসার মৃত্যুর সময় মীরের বয়স মাত্র ১৪ বছর কয়েক মাস। আনুমানিক ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। নিজের আত্মজীবনী ‘খসড়া নোট’ থেকে জানা যায় স্ত্রী বিয়োগের পর মীর মোয়াজ্জেম হোসেন মাত্র ছয় বছর জীবিত ছিলেন। ১২৭৩ সালের ৯ চৈত্র শুক্রবার বেলা দুটোয় নিজ বাড়ি পদমদীতে মৃত্যুবরন করেন।
পদমদীর জমিদার মীর মোহাম্মদ আলী ছিলেন মীর মশাররফ হোসেনের আপন চাচাতো ভাই। মীর মশাররফ হোসেন তার পরিবারেই প্রথম শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তাঁর হাতে খড়ি হয় গ্রামের মুন্সি জমির উদ্দিন খানের কাছে। তিনি তাঁর কাছে ফারসি ও আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর গ্রামের পাঠশালায় জগমোহন নন্দীর কাছে বাংলা ভাষায় শিক্ষা শুরু করেন। ১৮৬১ সালে কুমারখালী ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। তিনি পদমদী নবাব স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন ১৮৬৩ সালে। এরপর কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৮৬৫ সালে কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতায় চলে যান। সেখান থেকেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনে সমাপ্তি ঘটে।
বৈবাহিক জীবনঃ প্রথম স্ত্রী আজীজন নেসা। আজীজন নেসার সাথে ১৮৬৫ সালের ১৯ মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি কুলসুমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৮৭৪ সালে। ব্যক্তিগত জীবনে দুই বিবাহও তার জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছিল। তবে তাঁর বৈবাহিক জীবনে অশান্তি থাকলেও আশীর্বাদ হয়ে আসে দুই বিয়ের মধ্যবর্তী কাল। কারণ এই মধ্যবর্তী কালই তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা লগ্ন। প্রথম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ১৮৯৭ সালে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি কুলসুমের সাথে তাঁর মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি কুলসুম ১৯০৯ সালে ইন্তেকাল করেন।
মীর মোশারফ হোসেন ১৮৮৪ সালে সাহিত্য সাধনাকালে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি কিছু দিন কোলকাতায় চাকুরী করেন। তারপর শেষ জীবনে তিনি পদমদীর জমিদার এস্টেটের ম্যানেজার নিযুক্ত হন।
সম্ভবত ১৮৯৬ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের চাকরি ছেড়ে দিয়ে লাহিনীপাড়া এসে বসবাস করতে থাকেন।
মীর মশাররফ হোসেন ১৯ ডিসেম্বর ১৯১১ খ্রি. রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলাধীন পদমদী নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। সেখানেই তাঁর সমাধীসৌধ পরিবার পরিজনসহ। মীর মশাররফ হোসেনের জীবনকালের পরিসীমা ১৮৪৭-১৯১১ প্রায় ৬৪ বছর। তাঁর মৃত্যুর পর কোথাও কোন শোক সভা কিংবা স্মৃতিচারণমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯১১ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে নিরব ছিল। তাঁর মৃত্যুর এক বছর পর সৈয়দ এমদাদ আলী ‘কোহিনূর’ পত্রিকায় মীর মশাররফ হোসেনের উপর একটি শোকগাঁথা কবিতা প্রকাশ করেছিলেন। ১৯১২ সালে মো. রওশন আলী চৌধুরীর প্রস্তাবে চুঁচুড়ায় অনুষ্ঠিত সাহিত্য সম্মেলনে মীর মশাররফ হোসেনের মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাবিত গৃহীত হয়েছিলো। তাঁর মৃত্যুর আট বছর পর বাংলা ১৩২৭ সালের ১৬ই জৈষ্ঠ্য মীর মশাররফ হোসেন এর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কার্যালয়ে একটি চিত্র প্রতিকৃতি স্থাপিত হয়েছিলো। সেই থেকে দীর্ঘ সময় কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে।
মীর মশাররফ হোসেনের জীবদ্দশায় ব্রিটিশ বিরোধী বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল; সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫) সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) নীল বিদ্রোহ (১৮৫৮-১৮৫৯) এছাড়াও কয়েকটি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। এর কিছুদিন পর জন্ম নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৮৮৫) সংঘঠিত হয় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন (১৯০৫) এবং সেই সূত্রে স্বদেশী আন্দোলন এমনকি এই বঙ্গভঙ্গ রদও হয় তাঁর জীবদ্দশায়। মীর মশাররফ হোসেন যে অখ্যাত ও ক্ষুদ্র গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সেই গ্রাম কেন্দ্রিক পরিবেশে একটি সাংস্কৃতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছিলো । এ অঞ্চলের ঐতিহ্য ছিল নদীয়া বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রাম। যেমন কুমারখালীতে সাংবাদিক ও সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জন্মস্থান (১৮৩৩-১৮৯৬) লাহিনীপাড়া সংলগ্ন ছেঁউড়িয়া গ্রামে বাউল সম্র্রাট লালন সাঁইয়ের (১৭৭৪-১৮৯০) জন্ম ও সাধন ক্ষেত্র। এই অঞ্চলকে বলা হতো শিল্প সাহিত্যের উর্বর ভূমি।
কারণ দু’পা বেড়–লেই শিলাইদহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। ঠাকুর পরিবারের সাথে পদ্মাবিধৌত এ অঞ্চলের নিবিড় যোগসূত্র সুবিদিত। রেশমকুঠি ও নীলকুঠি কেন্দ্রিক ফিরিঙ্গী সংস্কৃতির সঙ্গে সামান্য হলেও পরিচিত ছিল এই এলাকার মানুষের। কাজেই কুষ্টিয়া কুমারখালীর ঐতিহ্যগত সারস্বত সাধনার এক কেন্দ্রভূমিতেই উনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলমান লেখক এবং কালজয়ী ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেনের আবির্ভাব হয়েছিল।
মীর মশাররফ হোসেনের জীবনকথার মূল উপজীব্য বিষয় আমরা পেয়েছি তাঁর জীবনীমূলক গ্রন্থসমূহ থেকে। যেমন-উদাসীন পথিকের মনের কথা, গাজী মিয়ার বস্তানী, আমার জীবনীর জীবনী ও কুলসুম জীবনী।
মীর মশাররফ হোসেনের পৈতৃক নিবাস পদমদীতে সরকারি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র, যা বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (সামাজিক, শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন) মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদ, রাজবাড়ী। মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদ, বালিয়াকান্দি।
মীর মশাররফ হোসেন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। বাংলা ভাষার অন্যতম গদ্য শিল্পী ও প্রথম বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃত।
তিনি উনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ মুসলিম সাহিত্যিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একাধারে তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, প্রহসন,আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্ম বিষয়ক মোট ৩৭টি গ্রন্থ রচনা করেন।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহঃ তাঁর প্রথম উপন্যাস রত্নাবতী প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ সালে। এটি রচনার মাধ্যমে তিনি মুসলিম লেখকদের মধ্যে প্রথম গদ্যগ্রন্থ রচনার মর্যাদা লাভ করেন। তাঁর কালজয়ী উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। উদাসীন পথিকের মনের কথা ১৮৯০ ও তাহমিনা ১৮৯৭ সালে পাঠকদের হাতে আসে।
নাটকঃ তাঁর প্রথম প্রকাশিত নাটক ‘বসন্ত কুমারী’ এবং দ্বিতীয় ‘জমিদার দর্পণ’ রচনাকাল ১৮৭৩ খ্রি.। ‘বেহুলা গীতাভিনয়’ ১৮৮৯, ‘নিয়তি কি অবনতি’ ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
প্রহসনঃ এর উপায় কি- ১৮৭৫ খ্রি. টালা অভিনয়- ১৮৯৭ খ্রি.,ভাই ভাই এইতো চাই-১৮৯৯ খ্রি. ফাঁস কাগজ- ১৮৯৯ খ্রি. এ কি-১৮৯৯ খ্রি. বাঁধা খাতা-১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ।
আত্মজৈবনিক রচনাঃ মীর মশাররফ হোসেনের জীবনকথা অর্থাৎ আত্মজৈবনিক রচনা ‘আমার জীবনী ও বিবি কুলসুম’ প্রকাশিত হয় মৃত্যুর একবছর আগে ১৯১০ সালে।
অন্যান্য গ্রন্থসমূহ ঃ গোরাই ব্রীজ (গৌরী সেতু-কাব্য) ১৮৭৩, পত্রিকা ‘আজিজন নাহার’ প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালে। এছাড়াও একে একে তাঁর সংগীত লাহরী, গো-জীবন, গাজী মিঞার বস্তানী, বাজিমাৎ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গ্রন্থসমূহ ঃ মৌলুদ শরীফ (গদ্যে পদ্যে রচিত ধর্মগ্রন্থ) ১৮৯০ খ্রি. মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা (শিশু শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক-১৯০৩ খ্রি.) বিবি খোদেজার বিবাহ (কাব্য ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ), হযরত ওমরের ধর্ম জীবন লাভ (কবিতা ১৯০৫ খ্রি.) হযরত বেলালের জীবনী (কাব্যগ্রন্থ ১৯০৫ সাল) হযরত আমীর হামজার ধর্মজীবন লাভ (কবিতা ১৯০৬ সাল) মদিনার গৌরব (কবিতা ১৯০৬ সাল) মোসলেম বীরত্ব (কবিতা ১৯০৭সাল), এসলামের জয় (ইতিহাস ১৯০৮ সাল) আমার জীবনী আত্মচরিত প্রথম খন্ড থেকে দ্বাদশ খন্ড ১৯০৮-১৯১০সাল), ঈদের খুতবা (আরবি খুতবার বাংলা ও উর্দু ভাষায় পদ্যানুবাদ ১৯০৯সাল) বিবি কুলসুম (জীবনী ১৯১০সাল) উপদেশ (হযরত লোকমানের উপদেশের পদ্যানুবাদ-১৯১৫ সাল)
অপ্রকাশিত/ অসমাপ্ত/অগ্রন্থিত রচনাঃ প্রেম পারিজাত/হযরত ইউসুফ (প্রবন্ধ), পঞ্চনারী (কবিতা), রাজিয়া খাতুন (উপন্যাস), দিনলিপির (ডায়েরী), বৃহৎ হীরকখনি (শিশুতোষ), ওফাতে রসুল (পদ্য রচনা), চোরের উপর বাটপাড়ি (কাহিনীধর্মী রচনা), শবে মিরাজ (পদ্য রচনা),আক্কাসের বিবর্ণ (পদ্য রচনা)।
অনুবাদ গ্রন্থঃ বিষাদ সিন্ধু (হিন্দি অনুবাদ) অনুবাদক- কবিন্দ বেনিপ্রসাদ বাজপেয়ী ১৯৩০ খ্রি.
বিষাদ সিন্ধু (ইংরেজি অনুবাদ) Ocean of Sorrow,Translate by Dr.Fakrul Alarm.
সম্পাদিত পত্র-পত্রিকাঃ আজিজন নাহার (মাসিক পত্রিকা), হিতকারী (সাপ্তাহিক/পাক্ষিক), হুগলি বোধোদয় (প্রকাশ তথ্য অজ্ঞাত)।
তথ্যসূত্রঃ
শ্রেষ্ঠ মীর মশাররফ হোসেন সমগ্র প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড-সম্পাদনা বেগম আকতার কামাল।
পত্রিকাঃ সাহিত্য সমাচার ও কাব্যকথার অনুরণন,
গুগল উইকিপিডিয়া।
লেখক: সালাম তাসির
কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও নাট্যকার।