শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

গো-খাদ্যের বিস্তীর্ণ চারণভূমি রাখালগাছি

মো. সাজ্জাদ হোসেন, গোয়ালন্দ ॥
  • Update Time : শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩৭ Time View

একাধিকবার নদীতে বিলীন হওয়া গোয়ালন্দ উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল রাখালগাছি। নামটাও যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর সেখানকার প্রকৃতি ও দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। ফসলের মাঠের যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই শুধূ সবুজ আর সবুজ। এ জেনো সবুজে ঘেরা একটি বিস্তীর্ণ মাঠ। রাখালগাছি চরাঞ্চলটি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজার মধ্যে অন্যতম একটি মৌজা। চারিদিকে পানিতে বেষ্টিত চরাঞ্চলটি এখন কিছুটা হলেও বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাটবাজার। এলাকাটি দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। নদীতে ভাঙতে ভাঙতে প্রায় সব পরিবারই বিভিন্ন স্থানে তাদের বসতভিটা নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। একসময় এখানে হাজার পরিবারের বসবাস ছিলো। এখনো এখানে প্রায় ১’শ পরিবারে প্রায় ৪/৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। মৌজাটি বছরের প্রায় ৬/৭ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ এলাকার মানুষের কৃষি ও নদীতে মাছ শিকার করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। শহরে যাতায়াতে রয়েছে ধরা বাধা নিয়ম কানুন। চলাচলের বাহনের মধ্যে রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি ও যন্ত্র চালিত ট্রলার এবং কাঠের তৈরি ছোট নৌকা। সম্প্রতি জায়কা প্রকল্পের আওতায় আড়াই কিলোমিটার ইটের রাস্তা হওয়ায় নিকটবর্তী পাবনা জেলার সাথে যাতায়াতে ঘটেছে নব বিপ্লব। এখন খুব সহজেই কৃষি পণ্য আনা নেয়ায় ব্যবহার হচ্ছে ভ্যান, অটোরিকশা, নছিমন, করিম ও ছোট-বড় ট্রাক। এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত। প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারেরই রয়েছে গরু, ছাগল, ঘোড়া ও হাঁস-মুরগি। গোখাদ্যের বিপুল সমাহার রয়েছে এ চরাঞ্চলে। সুতরাং পশুগুলোকে ঘাস ছাড়া বারতি কোনো খাবার দিতে হয় না তাদের। শুকনো মৌসুমে এ এলাকায় গেলে চোখে পরে এক মনোরম দৃশ্য। সবুজ ফসলের মাঠ জুড়ে বিচরণ করছে গরু, ছাগল ও ঘোড়া। বিস্ময়ের একটি ব্যাপার হচ্ছে এতোগুলো পশুর গলায় নেই কোনো রশি। পশুগুলো ইচ্ছে মতো ঘুড়ে ঘুড়ে এক মাঠ থেকে আর এক মাঠে বিচরণ করে ইচ্ছে মতো আহার করছেন। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কষ্টসাধ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের মাঠে বিচরণ করছে শত শত গরু। একটা পশু দড়ি বাঁধা নেই। গরুগুলো ইচ্ছে মতো ঘুড়ে ঘুড়ে ঘাস খাচ্ছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগেই রাখাল-রাখালী কোলে ভাতের গামলা নিয়ে নিজ নিজ গরুগুলো নিয়ে বাড়িতে ফিরছে। কথা হয় গ্রামের সহজ-সরল আইনদ্দিন মোল্লা, পরশ আলী মন্ডল, সাহেরা বানু, রশীদ খাঁসহ অনেকের সাথে, প্রশ্ন করতেই সহজ-সরল ভাষায় বললেন, সকালের খেয়ে দুপুরের খাবারসহ গরুগুলো নিয়ে মাঠে গিয়েছিলাম। মাঠে ছেড়ে দিয়ে নিজে চাষাবাদের কাজ করেছি। ওরা ইচ্ছা মতো খাই। দিনভর খাওয়া শেষে বাড়িতে নিয়ে আসি। এখন নদীতে পানি কম থাকায় ইচ্ছে মতো মাঠে ঘাস খেতে পারে। এখানে অনাবাদি অনেক জমি পরে থাকায় পশুদের খাদ্যের কোনো সমস্যা হয় না বরং দূর-দূরান্ত থেকে ঘাস নেয়ার জন্য ট্রলার ভর্তি নারী-পুরুষ প্রতিদিন এ চরে আসে। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে গোয়ালন্দের রাখালগিছি যাওয়া ট্রলার ঘাটগুলোতে দাঁড়ালে গোখাদ্য নিয়ে ফেরা ট্রলার চোখে পরবে। গোখাদ্য সংগ্রহের জন্য রাজবাড়ী সদরের উড়াকান্দা ঘাট, অন্তর মোড় ঘাট, দেবগ্রামের কাওয়ালজানি ঘাট, দৌলতদিয়া মুন্সী বাজার ঘাট, লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট এলাকা থেকে সকাল ৮ টায় ট্রলার ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com