ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পরও রাজবাড়ীতে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক মাধ্যমিক মাদ্রাসা ও কলেজ পর্যায়ের মোট ৭৬৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৭৪ টিতে আজও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।
রাজবাড়ীতে বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে তাও করা হয়না। জেলায় শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র ১৯৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মাতৃভাষা দিবস এলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন কোনটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয় আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। শহীদ মিনার না থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগেই মাতৃভাষা দিবস পালনে তেমন কোন আয়োজন হয়না। এতে ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদ ও মাতৃভাষার ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, জেলায় ৪৮২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এবং ৩৮৭ টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।
জেলা শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮৭ টি। এতে শহীদ মিনার রয়েছে ১০০ টিতে এবং ১৮৭ টি প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই।
এছাড়াও শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের বিশেষ কোন বরাদ্দ নাই। এ বিষয়ে সরকার কোন ফান্ড দেয় না।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস সহ অন্য জাতীয় দিবসে দূরে গিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও প্রতিবন্ধী সহ অনেক শিক্ষার্থী যেতে পারে না। ফলে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকের।
সুধীজনদের দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে ছেলে মেয়েরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে যেমন জানত । শহীদদের প্রতি বেড়ে যেতো তাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জেলার কয়েকজন বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকবে এমন নির্দেশনা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের সম্পর্কে জানতে পারতো।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল জানান, খুব শ্রীঘই আমরা জেলার প্রাথমিক সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করতে পারবো। অস্থায়ী ভাবে মডেল শহীদ মিনার বানিয়ে বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য বলা হয়েছে। জেলায় ৪৮২ টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার কথা একটাই আমরা বাঙালি বাংলা আমাদের ভাষা। এই ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে পৃথীবির বুকে আমরাই লড়াই করেছি। বাংলা ভাষাকে জাগ্রত রাখতে হবে। এবং এ ইতিহাস সমগ্র শিক্ষার্থীর মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা সবটুকু দিয়ে জেলায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার দেখতে চাই। এবং আশা করি খুব শ্রীঘই সেটা হবে।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। যারা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আছে তাদের কে বলা হয়েছে যেনো শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিতে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে হলে অবশ্যই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার দরকার। শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার দেখলে মাতৃভাষার প্রতি তাদের মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়।