রাজবাড়ীতে বেড়েই চলছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই জেলার হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। শুধু শহরে নয় প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পগছে ডেঙ্গু। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। জেলার সরকারি হাসপাতাল থেকে কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় রাজবাড়ীতে ৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ১২ জনসহ উপজেলার হাসপাতাল গুলোতে আরও ২০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি রয়েছে ৪৭ জন। তবে হাসপাতাল গুলোতে নেই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোন আলাদা ওয়ার্ড। সাধারণ রোগীদের সাথেই দেয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৬১৯ জন। এর মধ্যে ৫৭২ জন সুস্থ হয়েছে।
সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোন ওয়ার্ড নেই। সাধারণ রোগীদের মাঝেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জায়গা না থাকায় অনেক রোগী মেঝেতে রয়েছে। অধিকাংশ রোগী মশারি ছাড়া রয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশ, সেবামান, চিকিৎসক, নার্সদের নিয়ে রোগীদের অভিযোগ পাওয়া গেলেও মশারি টানাতে তেমন আগ্রহই দেখা যায়নি রোগীদের। সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের কানাডা গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন,তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজে লেখা পড়া করেন। গ্রামের বাড়ি থেকেই যাতায়াত করেন। গত তিনদিন আগে শরীরের জ্বর আসে। দুইদিন বাড়িতে থেকে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বরের ওষুধ সেবন করেন। জ্বর না কমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করে জানতে পারে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি আরও বলেন, সব পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়েছে। এমনকি হাসপাতাল থেকে কোন ওষুধ,স্যালাইন পান নাই তিনি।
একটু দূরে বেডে মশারি ছাড়া শুয়ে আছেন আলম। তার বাড়ি রাজবাড়ী পৌরসভার লক্ষিকোল এলাকায়। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছি। ডাক্তাররা কয়েকটি টেষ্ট করতে বলেন। সেগুলো বাইরের ক্লিনিক থেকে করিয়েছি। শুধু নাপা বড়ি ছাড়া সব ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরের ফার্মেসী থেকে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত কোন ডাক্তার আমার দেখতে আসে নাই। কোন নার্সও আসে নাই।
হাসপাতালের তিন তলাতে গিয়ে কথা হয় ফরিদা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, আমার তিনদিন জ্বর,মাথা ব্যাথা কিছু খতি পারি নে। তারপর হেনে আইছি। ডাক্তারা কয়ছে তোমার পরীক্ষা করা লাগবি। পরীক্ষা করার পর ধরা পড়লো ডেঙ্গু। এরপর আর একটি টেস দেছে সেইডে বাইরেতে করছি। টেস ডাক্তারের কাছে দিওয়ার পর কয়চে তোমার এখন ভর্তি হওয়া লাগবি। তারপর এ যে রইচি। ওষুধ পত্র যা লাগতেছে সব বাইরেরতে কিনতেচি। হেনতে শুধু মাত্র তিন বেলা তিনডে বড়ি দেয়। কোন বেড পাই নাই। মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, মশারি টানানোর জাগা নাই। টানায়া বাদবো কনে। তাই মশারি ছাড়াই আছি।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তানজিলা খান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের যেটা সবচেয়ে জরুরি সেটা হলো সেবা যতœ করা। রোগির প্রচুর পরিমান তরল খাবার খাওয়াতে হবে, মশারির মধ্যে থাকতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত রক্তসহ অনান্য পরীক্ষা করা। রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা তারা দিয়ে যাচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতাল থেকে নিয়মিত ওষুধ, স্যালাইন ও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটাই ট্রিটমেন্ট সেটা হলো জ্বরের জন্য নাপা ছাড়া অন্য কোন ওষুধ দেওয়া হয় না বা প্রয়োজন হয় না। স্যালাইনও খুব বেশি দরকার হয় না। যদি কোন রোগীর প্লাটিলেট ৫০ বা ৩০ হাজারের নিচে নেমে যায় তখন কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এজন্য নাপা ছাড়া অন্য কোন ওষুধ পাচ্ছে না রোগীরা অভিযোগ করতেই পারে। কারণ রোগীরা মনে করে তাদের অনেক ওষুধ দেওয়া হবে। আমাদের রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এত বেশি চাপ যে জনবল সংকটের কারণে একটা দুইটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই পারে। এটা আসলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে সবাইকে।
সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটোন বলেন, আমাদের পরামর্শ হলো কারও যদি জ্বর আসে তাহলে সে যেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নেয়। জেলার সরকারি হাসপাতাল গুলোতে কম মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। এছাড়াও যদি কারও ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকে সে যেন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করেন। সেই সাথে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যেন বাড়ির চারপাশ পরিস্কার থাকে। ফুলের টব বা কোন পরিত্যক্ত পাত্রে দীর্ঘদিন পানি যেন না জমে থাকে। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।