শফিকুল ইসলাম শামীম ॥
অঞ্জলি শেখ। বয়স সঠিক বলতে পারে না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে স্বামী নিরাপদ শেখ মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর একা হয়ে যান অঞ্জলি শেখ। স্বামীর রেখে যাওয়া চার সন্তানের মানুষ করতে মানবেতর জীবন-যাপন চলতে থাকে। বয়সের ভারে এখন একা চলতে কষ্ট হয়। তবুও জীবন চালাতে অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘরের বাহিরে আসতে হয় স্বামী হারা অঞ্জলি শেখের। অঞ্জলি শেখ রাজবাড়ী জেলা গোয়ালন্দ পৌর ১নং ওয়ার্ড এলাকার মৃত্যু নিরাপদ শেখের স্ত্রী। প্রায় ২০/২৫ বছর পূর্বে স্বামী নিরাপদ শেখ মারা যায়। তখন চার সন্তান অনেক ছোট। তাদের বড় করতে ঘরের বাহির হয়ে কর্ম করতে হয়। মাঠের কাজ ঘরের কাজ সব করতে হতো। অন্যের বাড়ী কাজ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে। ছেলে দুইজন বিয়ে করেছে। তাদের নিজেদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই বৃদ্ধ নারী অঞ্জলি শেখের অবসর এখনও হয়নি। অন্ন সংগ্রহ করতে কাজ করেন।
বৃদ্ধ অঞ্জলি শেখ এক সময় অনেক কাজ করতে পারতেন। এখন বয়সের ভারে চলতে পারে না। যেকারণে কাজও পান না। আয়-রোজগারও হয় না। তাই সকালে ঘর থেকে বের হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করেন। গাছের পাতা এবং মরা ঢাল কুড়িয়ে থাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তার কাজ। পরবর্তীতে এই পাতা বিক্রি করে নিজের খাবার ও কাপড় জোগার করেন। এভাবেই চলে অঞ্জলি শেখের জীবন। এসময় প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় অঞ্জলি শেখের। তিনি জানান, নারী দিবস কি জানি না। কখনও শুনি নাই। আর আমরা দিবস দিয়ে কি করবো। ক্ষুদার যন্ত্রনায় এই অসুস্থ্য শরীর নিয়ে পাতা কুড়াতে এসেছি। পাতা বিক্রি করে চাউল কিনতে হবে। তাহলে আমরা দিবস বুঝবো কিভাবে। কাজ করার কারণে শরীর ব্যথা করে। ব্যথার যন্ত্রনায় সারারাত ঘুমাতে পারিনা। তবুও সকাল হলে আবারও কাজের উদ্দ্যেশে ঘরের বাহিরে যেতে হয়। তিনি আরও বলেন, ২০/২৫ বছর যাবৎ স্বামী মারা গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে কখনও অবসর নিতে পারিনি। এই বৃদ্ধ বয়সেও অবসর নিতে পারছি না। খাবারের জন্য কাজে আসতে হয়। একদিন কাজ না করলে অনাহারে থাকতে হয়। এখন আর অবসরের চিন্তা করি না। গরীবের আবার অবসর কিসের। মারা যাওয়ার আগে হয়তো আর অবসর পাবো না।