বুধবার দিবাগত ভোর রাত ৩টার দিকে হঠাৎ পদ্মা নদীর ভাঙনে দৌলতদিয়া ৩নং ফেরি ঘাট ও ঘাটের পাশে অবস্থানরত ৫টি পরিবারের বসত বাড়ী নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। এতে বন্ধ রয়েছে ৩নং ফেরি ঘাট। অন্য জায়গায় ঘর-বাড়ী সরিয়ে নিচ্ছে ঘাটের আশে-পাশে বসবাসরত ব্যক্তিরা।
জানা যায়, এর আগে পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে গত ৬ সেপ্টেম্বর দৌলতদিয়া ঘাটের ৫নং ফেরি ঘাট নদী গর্ভে চলে যায়। ৫নং ফেরি ঘাট নদীতে চলে যাওয়ায় প্রায় ১মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে ঘাটটি। বর্তমান দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের ৭টি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ১ ও ২ নং ফেরি ঘাট কয়েক বছর যাবৎ বিকল হয়ে পরে আছে। চলতি মাসের সেপ্টেম্বর থেকে ৫নং ফেরি ঘাট বন্ধ রয়েছে। ভোর রাত থেকে ৩নং ফেরি ঘাটের কিছু অংশ নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে। ৪ নং, ৬নং ও ৭নং ফেরি ঘাট সচল রয়েছে। জরুরী ভাবে নদী শাসনের কাজ না করলে দৌলতদিয়া ঘাট নদী ভাঙনের হুমকির মুখে।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা বন্দরের অফিস সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ রাত ৩টার পর থেকে ৩নং ফেরি ঘাট ও ঘাটের নিচের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। জরুরী ভাবে ফেরি ঘাট রক্ষার জন্য বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভাঙন এলকায় নদীতে ফেলানোর কাজ চলছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ৩নং ফেরি ঘাটের পাশে অবস্থিত ষাটোর্ধ্ব সালাম বেপারী জানান, ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৩টা বাজে। চতুর পাশে নিরব। গভীর ঘুমিয়ে আছে পরিবারের সবাই। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ। এ শব্দ নদীর পানির। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি আমার রান্না ঘরের কিছু অংশ নদী গর্ভে। কি করবো, কি করবো না বুঝে উঠতে পারছি না। ঘরের মধ্যে গভীর ঘুমিয়ে থাকা সন্তানদের বের করবো, নাকি আসবাব-পত্র বের করবো।
নদীতে ভাঙন কবলিত হান্নান কাজীর স্ত্রী জোসনা বেগম বলেন, কোথায় যাবো? আমাদের জায়গা দেবে কে? একাধিকবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছি। জায়গা জমি থাকলে আমরা কি নদীর পারে এসে বসবাস করতাম। তিনি বলেন, রাতে যখন নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে তখন আমাদের রক্ষা করতে কেউ আসেনি। কে আসবে? আমাদের কাছে আসে শুধু শুনতে, এর পর আর কারো খোঁজ থাকে না। আমরা কি সরকারের কোন সহযোগিতা পাবো না।
নদীতে ভাঙন কবলিত রেজাউল মোল্লার স্ত্রী সম্পা আক্তার বলেন, আমার শ^শুরের অনেক জায়গা-জমি ছিল। এখন কিছু নেই। সব নদীতে ভেঙ্গে গেছে। আমার এখন থাকার মত জায়গা নেই। রাস্তার পাশে ঘর রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘরে খাবার নেই। এদিকে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবো।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ আরিচা বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে রাত ৩টা থেকে ৩নং ফেরি ঘাট নদী ভাঙনের কবলে পরায় আমরা সকাল থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু করেছি। এই কাজ চলমান থাকবে।