৬৪ বছর বয়সেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ফুটবল অঙ্গন। খেলে যাচ্ছেন নিয়মিত ফুটবল। বয়স যেন তুচ্ছ ফুটবলার নারুর কাছে। বয়স কোনো বাধা নয়, ইচ্ছে শক্তিই বড়। কথাগুলো অকপটেই বলছিলেন ফুটবলার নারু। বয়স ৬৪ পেরিয়ে ৬৫ বছরে পদার্পন করেছে আরিফ হোসেন নারু। জাতীয় কোনো পুরস্কার নেই, নেই কোনো বড় দলের ডেরা তবুও থেমে নেই নারু। এখনো যুবকদের মতো মাঠে দিব্বি দৌড়ান নারু। দেখে মনে হয়না তার বয়স ৬৪ বছর। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড সামচু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা আরিফ হোসেন নারু। তিনি সামচু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা মৃত চেনর উদ্দিন শেখের সেজো ছেলে।
জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা রয়েছে তার। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা থাকায় লেখাপড়া বেশিদূর এগুতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বরাবরই ছিলো তার। দিন শেষে বিকেল হলেই ফুটবল নিয়ে ছোটেন মাঠে। নিজে খেলেন এবং অন্যদেরকে খেলা শেখান। রাজবাড়ী জেলার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও রয়েছে নারুর ব্যাপক পরিচিতি। সম্প্রতি গোয়ালন্দ ফুটবল একাডেমীর হয়ে রাজবাড়ী মাটি পাড়া তরুণ ক্লাব আয়োজিত হোন্ডাকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে দাপটের সাথে দেশ সেরা অন্য খেলোয়াড়দের সাথে লড়াই করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গোয়ালন্দ ফুটবল একাডেমীকে জিতিয়েছেন হোন্ডা (মোটরসাইকেল)। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ছাড়া শনিবার হতে বৃহস্পতিবার বিকেলে গোয়ালন্দ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলে গেলেই দেখা মেলে ফুটবলার নারুর। নিয়মিত প্রাকটিস করেন এবং অন্যদের করান। সম্প্রতি বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে নিবন্ধিত সংগঠন “গোয়ালন্দ ইয়ুথ এন্ড স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র” কোচ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সপ্তাহে ৬ দিন ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি। স্থানীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে পরিচিত একজন খেলোয়াড় তিনি। টুর্নামেন্ট শুরু হলেই বিভিন্ন দলে খেলার ডাক পান তিনি। এমনকি গোয়ালন্দ ফুটবল একাডেমী, গোয়ালন্দ ইয়ুথ এন্ড স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, গোয়ালন্দ সোনালী অতীত ক্লাব, দৌলতদিয়া ফুটবল একাডেমীসহ বিভিন্ন দলের দলীয় অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ফুটবল খেলার পাশাপাশি একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে বাংলাদেশ শিশু-কিশোর খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি রাজবাড়ী জেলার সভাপতি, গোয়ালন্দ ফুটবল একাডেমীর সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত জাতীয় অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্টে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলের প্রধান কোচের দায়িত্বও পালন করেন।
গোয়ালন্দ সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম চানমিয়া বলেন, ফুটবলার নারু ভাই আমাদের ২০ বছরের বড়। আমরা মাঠে একটু খেললেই হাপিয়ে উঠি। কিন্তু নারু ভাই দিব্বি ৯০ মিনিট একধাচে দৌড়াতে থাকেন মাঠে। বয়স ৬৪ হলে তিনি এখনো যুবকদের মতো মাঠে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন।
গোয়ালন্দ ফুটবল একাডেমীর সভাপতি গোলাম মোস্তফা সোহাগ বলেন, নারু ভাই একজন অসাধারণ মনের মানুষ। নিয়মিত খেলাধুলা করেন বলেই তিনি এখনো শারীরিকভাবে ফিটনেস ধরে রেখেছেন। তিনি এই বয়সে এখনো মাঠে খেলেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন বয়সী খেলোয়াড়দের ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
গোয়ালন্দ ইয়ুথ এন্ড স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ৬৪ বছর বয়স কম নয়! যেখানে বাংলাদেশের একজন মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরের একটু বেশি, সেখানে নারু ভাইয়ের বয়স চৌষট্টি। মৃত্যুর কোনো বয়স নেই! তবে এই বয়সে একজন মানুষের, বয়সের ভারে নুয়ে পরার কথা আর সেখানে তিনি দিব্বি মাঠে দৌড়ান নিয়মিত। নিজে খেলেন অপরকে শেখান। দোয়াকরি তিনি জেনো এভাবেই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকেন অনেক বছর।