রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

পাংশায় দেখা মিলেছে বাবুই পাখির বাসা

রতন মাহমুদ, পাংশা:
  • Update Time : শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
  • ৩৩ Time View

বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, ‘কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।’ বাবুই হাসিয়া কহে, ‘সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, তবু ভাই, পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা। কবি রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ এ কবিতাটি কম-বেশি সবারই জানা। এই কবিতাটি এখন এদেশে তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। শুধু পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই এখনকার শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির শিল্প নিপুণতার কথা জানতে পারে। এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য।

ছোট্ট পাখি বাবুই মূলত তাল গাছেই তাদের বাসা বাঁধে এমনটি দেখা যায় আদিকাল থেকেই। শক্ত বুননের বাসা যেন শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি। কালের আবর্তে গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা মেলে না কবি রজনী কান্ত সেনের লেখা কবিতার নায়ক বাবুই পাখি’র এবং তার স্বাধীন বিচরণের জন্য নান্দনিক বাসা। সেই সঙ্গে কিচিরমিচির শব্দও এখন আর শোনা যায় না। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপিরকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণে মানব বসতি বাড়ায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিলুপ্ত হতে বসেছে।

রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলায় একসময় কয়েক প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। এখন শুধু টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না। শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে, বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেন চোখে ভেসে আসে।

অথচ রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছ দেখা যেত। আর সেই তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে আরো ফুটিয়ে তুলতো। কিন্তু এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। কিন্তু অনেকদিন পর জেলার পাংশা উপজেলার পৌর শহরের সত্যজিৎপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াজেদ শেখ এর বাড়ির প্রাঙ্গনে তাল গাছে দেখা মিললো সেই দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা।

ওয়াজেদ শেখ জানান, এই গ্রামে অনেক তাল গাছ থাকলেও দীর্ঘ অনেক বছর বাবুই পাখির বাসা বাধতে দেখা যায়নি। তবে হটাৎ এইবার এই তালগাছে কিছুদিন হলো বাবুই পাখি বাসা বেধেছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা কাওছার বিশ্বাস বলেন, বাবুই পাখির বাসা বহু আগে আমাদের এলাকায় প্রতিটি তাল গাছে হরহামেশা দেখা গেলেও এখন আর চোখে পড়ে না। হঠাৎ করেই কিছুদিন হলো এই তালগাছে পাখিগুলো বাসা বেঁধেছে।

পাংশা প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহবায়ক শামিম হোসেন বলেন, অতিমাত্রায় গাছ ও ফসলের মাঠ উজাড় করে শিল্প-কারখানা সঙ্গে ইটের ভাটা নির্মাণে আজ জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। যে কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার শিল্পকর্ম।পরিবেশ বিষয়ে মানুষের অসচেতনতাই বাবুই পাখির বাসাকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেছে বলে মনে করেন। তিনি আরো বলেন প্রকৃতির ভারসাম্য ধরে রাখতে এ বুননশিল্পী পাখি ও তার শিল্প টিকিয়ে রাখা দরকার।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com