রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর:
অন্ডথলির রোগ ভুগছেন অনেক পুরুষ -ডা. রাজীব দে সরকার গোয়ালন্দে দুরন্ত ক্রিকেট একাদশ অর্জিত ট্রফি প্রদর্শনী পাংশায় যুবদল নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ রাজবাড়ীতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ১ রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা বাস্তবায়নে কালুখালীতে বিএনপির জনসমাবেশ রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মিজ সুলতানা আক্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার খানখানাপুর বাজার এলাকার আব্দুল গণির পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন মা যে তথ্য দেবে সেই তথ্যের উপরই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে কেকেএস ও ফ্রিডম ফান্ডের আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও তাদের মায়েদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিতকরণে অ্যডভোকেসি সভা পাংশায় যুবদল নেতা ফরহাদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ সোনাপুর বাজারে ব্যবসায়ীকে মারপিটের প্রতিবাদে সমাবেশ ইয়াবাসহ গ্রেফতার মাদক ব্যবসায়ী

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি ওয়াজউদ্দিন

মো. নাহিদুল ইসলাম ফাহিম॥
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮৮ Time View

প্রথমে ট্রেনিং করেন আনসারে। পরবর্তীতে যোগ দেন আনসার ব্যাটেলিয়নে। চাকরি থেকেই গিয়েছিলেন যুদ্ধে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কুষ্টিয়ার ওয়ারলেস এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টাও করেন তিনি। ২০২০ সালে তাকে নিয়ে একটি লেখাও প্রকাশ পায় ‘৭১ মুক্তিযুদ্ধ রাজবাড়ী’ নামের একটি বইয়ে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে আজও কাগজে-কলমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার রামকান্তপুর ওই গ্রামের ওয়াজউদ্দিন। বৃদ্ধ বয়সে পেনশনের সামান্য টাকায় অতিবাহিত করছেন দিন। ৪ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শুধু স্বামী-স্ত্রীই থাকেন বাড়িতে। বেশ কিছুদিন যাবত পিঠে একটি টিউমার দেখা দিলেও অর্থাভাবে তার অপারেশন করতে পারছেন না তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রীর সংসার তাদের। ১৪ শতক জমির উপর রয়েছে বাড়িটি। জমিটি তার শশুর বাড়ির সূত্রে পেয়েছিলেন তার স্ত্রী মৃত মাহফুজা বেগম। সেটাও মেয়েদের নামে করে দিয়েছিলেন তিনি। এর বাইরে আর কোনো জমি নেই তার। ৪ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে চাকরির পেনশনের ১০ হাজার ৬শ টাকা দিয়ে কোনো রকমে চলছে তাদের সংসার। তার বা পায়ের উপরিভাগে রয়ে গভীর গর্তের মতো ক্ষত। মুক্তির জন্য লড়াই করতে গিয়ে ৩টি গুলি লেগে হয় সে ক্ষত। এছাড়াও পিঠে রয়েছে একটি টিউমার। হচ্ছে না তার চিকিৎসা। তার দাবী, ভাতা প্রয়োজন নেই, কষ্ট করেছি তাই মৃত্যুর আগে কাগজে কলমে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খেতাব পেতে চাই। আমি সম্মানের সাথে মরতে চাই।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. ওয়াজ উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘ শুরুর দিকে আমি ট্রেনিং করেছিলাম আনসারে, কয়েকটি ট্রেনিং করার পরে নিয়ে নিলো আনসার ব্যাটেলিয়নে। ১৯৬৯ সালে চাকরিতে প্রথম মাসের বেতন তুলি আড়াইশো টাকা। এভাবেই চলে চাকরি। দেশে শুরু হয় যুদ্ধ। তখন আমি আনসার ব্যাটেলিয়ন হিসেবে রাজবাড়ীতে কর্মরত ছিলাম। এমন সময় তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার এসডিও শাহ মোহাম্মদ ফরিদের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন জেলা ডেপুটি কমান্ডার এ.কে. এম নূরন্নবী এসে বললেন, ‘এই ব্যাটারা মরার জন্য রাজি আছিস কারা কারা?’ আমরা ১৮ জন হাত তুলি। তখন নূরুন্নবী বলেন, ‘সেখানে গেলে কিন্তু ফিরে আসা নাও হতে পারে, যখন তখন ঝড়ের মতো গুলি আসতে পারে এবং সেখানেই আমরা মরে যেতে পারি তাই ভেবে চিনতে রাজি হতে হবে। ‘

আমরা আগ্রহ প্রকাশ করলে আমাদেরকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে যান ডেপুটি কমান্ডার এ. কে. এম নূরন্নবী। কুষ্টিয়ায় একদিন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ওয়ারলেস থেকে বালুঝড়ের মতো অঝোরে গুড়ি ছুড়ে চলেছে খান বাহিনীর সদস্যরা। আমরা কোনো মতে মাথা মাটির সাথে মিশিয়ে নিজেদের কিছুক্ষণ আড়াল করে রাখি। আমার ৩ হাত বামে ছিল এক সহযোদ্ধা হঠাৎ তার হেলমেটে এসে গুলি লাগলো। হেলমেটটি পরে যাওয়ায় পরবর্তীতে পাচ ছয়টা গুলি তার মাথায় এবং শরীরে এসে লাগলো। তখন অর্ডার এলো গুলি করতে হবে, নইলে এই পরিস্থিতিতে আমরা কেউ বাচতে পারবো না। তখন আমাদের কারও মাথায় হেলমেট আছে কারও নেই। গুলি ছুড়তে শুরু করলাম সেদিন আমরা বাকিরা কোনো মতে সুস্থভাবেই ফিরে এসেছিলাম।

তবে পরেরদিন আবার যখন যাই, সেদিন কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পরে একসময় খান বাহিনীর ছোড়া গুলি আমার পায়ে এসে লাগে। একই সময়ে পরপর ৩টি গুলি আমার পায়ে এসে লাগে। আমি তখন হাটতে না পেরে পরে যাই। আমার সহযোগিদের মধ্যে থেকেই কেউ আমাকে নিয়ে যায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে। সেখানে প্রায় ৩ মাস চিকিৎসা চলতে থাকে আমার।

একসময় আমার পরিবারের লোকজন আমার কোনো খোজ-খবর না পেয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে আসার সিদ্ধান্ত নেয়, পরে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার এসডিও শাহ মোহাম্মদ ফরিদ একটি ইঞ্জিনের সাথে ১ টি কোচ নিয়ে আমার পরিবারের ১১ জন সদস্যকে সাথে নিয়ে কুষ্টিয়া গিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন যাবত শারিরীকভাবে অসুস্থ ছিলাম। তবে শেষে আবার কিছুদিন নুরুন্নবীর নেতৃত্বে রাজবাড়ী জেলার আহলাদীপুর মোড়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত অংশগ্রহণ করি।

আমি সেই চাকরির পেনশন পাই। পেনশনের সেই ১০ হাজার ৬শ টাকা পেনশন দিয়েই এখন আমি চলি। তবে আমি কোনো ভাতা দাবি করি না। জীবনে কষ্ট করেছি অনেক। অনেক চেষ্টা করেছি, তবুও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ পাইনি। পাইনি মুক্তিযোদ্ধা খেতাব। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানের সাথে মরতে চাই। ‘

মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা দক্ষিণ অঞ্চলের নেতৃত্বপ্রাপ্ত জেলা ডেপুটি কমান্ডার এ কে এম নুরুন্নবী স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নে লেখা রয়েছে, রাজবাড়ী জেলা সদর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ওয়াজ উদ্দিন তালুকদার আমার সাথে ১৯৭১ সালে ৩০ মার্চ তারিখে কুষ্টিয়ার মিলপাড়ায় ওয়ারলেস স্টেশনে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে গুলিবিদ্ধ হয় এবং তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সেখানে প্রায় ৩ মাস অবস্থান করেন৷ পরবর্তীতে সে আমার সহিত ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে রাজবাড়ীর আহলাদীপুরে ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। সে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তার অবদান চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com