সাগরের মৃত্যুতে কাঁদছে টাকাপোড়া গ্রাম। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৯ জুলাই মিরপুর গোলচত্বরে পুলিশের গুলিতে মারা যান সাগর আহমেদ (২১)। তিনি মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের একমাত্র ছেলে সাগর।
গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাগর বাবাকে ফোন করেন। সবার খোঁজখবর নিয়ে বিকাশে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। আধাঘণ্টা বাদেই টাকা দেন তোফাজ্জল। পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হতে কল দেন; কিন্তু রিসিভ হয় না। তখনই সন্দেহ হয়। কারণ ঢাকায় যে আন্দোলন চলছে, জানেন তোফাজ্জল। একটার পর একটা কল দিতেই থাকেন। মিনিট দশেক পর একবার রিসিভ হলে অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন বলেন, সাগর পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন নির্মম সত্যটি। ছেলে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা তোফাজ্জেল হোসেন। প্রতিবেশিদের কাছে ছেলেকে নিয়ে নিজের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন হাতড়ে ডুকরে কাঁদছেন। মা গোলাপী বেগম ছেলের শোকে নির্বাক। কান্না থামছে না বোন নুশমীর।
পেশায় কৃষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, মাঠে কাজ করা দেখে সাগর প্রায়ই বলত বাবা, আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো। তোমাকে আমি আর রোদে পুড়তে দেব না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কেউ কখনও এমন করে আর বলবে না। ছেলের মৃত্যু নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ক্ষোভ-অভিযোগ দিয়ে লাভ নেই। ধৈর্য ধরার চেষ্টা করছি। আমার বুকের মানিক যেন পরপারে ভালো থাকে। তোফাজ্জল জানান, তাঁর মেয়ে নারুয়া লিয়াকত আলী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। বোনকে নিয়ে সাগরের অনেক স্বপ্ন ছিল। নুশমীকে ঢাকা নিয়ে কোচিং করাবে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে। দুই ভাইবোন এক জায়গায় থাকবে। লেখাপড়া শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে।
সাগরের চাচাতো ভাই সাইফুল হোসেন জানান, ঢাকায় তারা দু’জন একসঙ্গে থাকেন। শুরু থেকে আন্দোলনে যায়নি সাগর। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে ১৯ জুলাই দুপুরের পর বাসা থেকে বের হয়। চাচা জানানোর পর কল দিলেও রিসিভ হয়নি। পরে সাগরের ফোন থেকেই কল দিয়ে মিরপুর ড. আজমল হাসপাতালে যেতে বলেন। ছুটে গিয়ে সাগরের নিথর দেহ পান।
সাগরের চাচা মুনছুর আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান জানান, ২০ জুলাই গ্রামের বাড়িতে সাগরকে তারা দাফন করেন। এক সপ্তাহেও ওর মা-বাবা এবং বোন স্বাভাবিক হতে পারেনি।
এলাকাবাসী জানায়, খুব ভালো ছেলে ছিল সাগর। বিনয়ী ও মিষ্টভাষী। তাকে হারিয়ে টাকাপোড়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।