যাত্রীবাহী বাস নয়, গুরুত্ব সহকারে পণ্যবাহী ট্রাক নদী পারাপার করা হচ্ছে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের ভোগান্তি এখনও কমেনি। ৭/৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরি পার হতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। লোকাল যাত্রীদের ৩/৪কিঃমিঃ পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে।
সোমবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের ৪কিঃমিঃ জুরে বাংলাদেশ হ্যাচারী পর্যন্ত যাত্রীবাহী পরিবহন ও পন্যবাহী ট্রাকের দুইটি সারি রযেছে। এসময় দেখা যায় যাত্রীবাহী পরিবহন পিছনে রেখে অগ্রাধিকার ভিপ্তিতে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো নদী পারাপার করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস কিং ফিশার পরিবহনের যাত্রী নাছিমা আক্তার জানান, সকাল ৯টায় দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি। এখন বিকেল ৩টা বাজে তবুও ফেরি ঘাটে যেতে পারিনি। কখন পারবো সেটাও বলতে পারছে না কেউ। তিনি আরও বলেন, এই মাঝ রাস্তা থেকে ফিরেও যেতে পারছি না, ঢাকায়ও যেতে পারছি না। একটা মানুষ কতক্ষণ গাড়ীর মধ্যে বসে থাকবে। দুই ঘণ্টা, ৫ঘণ্টা। এর বেশি থাকা কি সম্ভব? বাইরে গিয়ে টয়লেটের খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা নারী কোথায় যাবো। সাথে অতিরিক্ত টাকাও নেই। সারা দিনে শিশু বাঁচ্চার কিছু কিনে দিতে পারছি না। এই কষ্ট আমি কাকে বললো। এখন আমার কান্না পাচ্ছে।
রাজবাড়ী পাংশা থেকে ঢাকামুখি যাত্রীবাহী বাস রাজবাড়ী পরিবহনের মিরাজ-সাথী দম্পতি এক সাথে বলেন, সকাল ৭টায় গাড়ী ছেড়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে সময় লেগেছে ১ঘণ্টা। কিন্ত বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩কিঃমিঃ রাস্তা সামনে যেতে পারলাম না। যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা ও গাড়ীর মধ্যে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে বসে আছে। দেখে যেন মনে হয় সংশ্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
যাত্রীবাহী বাস সোহাগ পরিবহনের চালক কোরমান আলী জানান, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের দুর্ভোগের কথা বলে বোঝানো যাবে না। ৬ঘণ্টা যাবৎ ঘাটে এসে অপেক্ষায় আছি। ফেরি ঘাটে যেতে পারি নাই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু সিরিয়াল ঠেলে সামনের দিকে যেতে হচ্ছে। একটু বিশ্্রাম নিতে পারছি না। ঘুম চোখে নিয়ে গাড়ী চালাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন কোন তথ্য না দিয়ে বলেন, সিরিয়ালের দায়িত্ব পুলিশের।
রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. আকবর হোসেন বলেন, বিগত কয়েক দিনের চেয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। তবে কিছু পণ্যবাহী ট্রাক দৌলতদিয়া টার্মিনালে নেওয়া হচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিপ্তিতে পচনশীল পন্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস ফেরি পারাপার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা বন্দরের উপ-পরিচালক শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমান ২১টি ছোট বড় ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়া পারে ৪টি ঘাট সচল রয়েছে। তবে ঈদের ছুটি শেষে কর্মমুখি মানুষের চাপ ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের যানবাহনগুলো এই নৌরুট ব্যবহার করায় অতিরিক্ত চাপ পরেছে। যে কারণে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে ঈদের ছুঁটি শেষে যানবাহনের সারি রয়েছে। তবে, যানবাহনের সংখ্যা কমে আসছে। আগামী কালকের মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট স্বাভাবিক হতে পারে।