দেশে প্রথমবারের মত ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপন করেও বাঁচানো গেল না শামীমা আক্তারকে (৩৪)। ১৫ মাস বেঁচে থাকার পর গত ২ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) তিনি মারা যান।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারীতে বিএসএমএমইউতে ‘ব্রেইন ডেড’ ঘোষিত তরুণী সারাহ’র দান করা দুটি কিডনির একটি প্রতিস্থাপন করা হয় শামীমার শরীরে। অপর একটি কিডনি হাসিনা আক্তার নামে যে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় তিনি মারা যান গত বছরের অক্টোবর মাসে।
নিহত শামীমার বড় ভাই শাহাজাদা হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শামীমা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বিপিন রায়ের পাড়ার বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মরহুম সালেহ আহমেদের মেয়ে। বুধবার সকাল ১০ টায় জানাযা শেষে শামীমার লাশ গোয়ালন্দ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শামীমার ভাই শাহজাদা জানান, “দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের দান করা দুটি কিডনির একটি তার বোনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এরপর দুইতিন মাস ভাল থাকলেও তারপর হতে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। যে সমস্যাগুলো কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে ছিল না। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত মাসের (মার্চ) ৫ তারিখ তার বোনকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। তার বোনের শয্যার পাশেই ভর্তি করা হয় একজন যক্ষা রোগীকে। সেখানে মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু ১৮ মার্চ রাতে অতিরিক্ত ফ্যানের বাতাসে সে কাঁপতে শুরু করে। নার্সদের অনুরোধ করলেও তারা ফ্যান বন্ধ করতে দেয়নি। এক পর্যায়ে বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে উচ্চ মাত্রার ওষুধ দেয়ায় সে আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ডায়ালিসিসও করেছিলাম। ডায়ালিসিস নেয়ার সময় রোগীর উচ্চ মাত্রা তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়, কিন্তু শামীমার রক্তচাপ ছিল নিম্ন। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে তার বোন মারা যায়।”
তবে সারাহ’র চোখের কর্নিয়া দেওয়া হয়েছিল যে দুজনকে তারা এখন ভালোভাবেই চোখে দেখতে পান বলে জেনেছি। আমার বোন না বাঁচলেও আমরা সারাহ ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
শাহজাদা অভিযোগ করে বলেন, “হাসপাতালে তার বোনকে ভাল চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় নি। তবে একমাত্র ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল একটু চেষ্টা করেছিলেন। সেখানে একটা টেস্ট পর্যন্ত ফ্রি নাই। আসার সময় আইসিইউ এর ৪০ হাজার এবং মেডিসিনের আরো ৪০ হাজার টাকার দুটো বিল হাতে ধরিয়ে দিয়ে লাশ আটকে রেখেছিল। কিন্তু সেই বিল মেটানোর সামর্থ্য আমাদের ছিল না। কর্তৃপক্ষ কি পারত না আমাদের ফ্রি করে দিতে?” পরে দুলাল স্যারের রেফারেন্সে এবং কয়েকজন সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে ২/৩ দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধ করব মর্মে কাগজে স্বাক্ষর রেখে লাশ দিতে রাজী হয়।
শামীমার কিডনি প্রতিস্থাপনকারী চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত ৬ মাস শামীমা কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানের বাইরে ছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিন সপ্তাহ আগে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার ফুসফুসে সংক্রমণ এবং হেপাইটাইসিস সি ধরা পড়ে। এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর ফলোআপে থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু সে বাড়িতে গিয়ে আর ফলোআপে আসেনি। আসার পর দেখি ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। আমাদের এখানে ভর্তি করার পর তার লাংয়ে ইনফেকশন ধরা পড়ে, পাশাপাশি সি ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়।
গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি “বিনামূল্যেও কিডনি পেয়েও দুশ্চিন্তায় গোয়ালন্দের শামীমা” শিরোনামে নামে দৈনিক আমাদের রাজবাড়ী পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।