শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

বাবার কোলে ২২বছরের রিপা!

শফিকুল ইসলাম শামীম ॥
  • Update Time : শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২
  • ১৬৪ Time View

রিপা আক্তার(২২)। একা চলতে পারে না, বসতেও পারে না। বাবা-মায়ের কোলে শিশুর মত থাকতে হয়। মায়ের কোলে ঘুমাতে হয়। শরিফুল শেখ-রুবি বেগম দম্পতির ২২ বছর বয়সী মেয়ে রিপাকে দেখলে মনে হয় ৬/৭ বছরের শিশু। এই দম্পতির আরোও ২জন ছেলে রয়েছে। তবে তারা সবাই স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠেছে।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সামসু মাস্টার পাড়ার অসহায় বাবা চা বিক্রেতা শরিফুল শেখ। নিজের জায়গা জমি না থাকায় অন্যের জমিতে ছোট্ট একটি ছাপড়া ঘর তুলে অসুস্থ্য শিশু বাচ্চা রিপা আক্তারকে নিয়ে বসবাস করেন।

চা বিক্রি করে প্রতিদিন ৩/৪ টাকা আয় করেন। সংসার খরচ চালিয়ে অসুস্থ মেয়ে রিপাকে সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না। আর সুচিকিৎসা না পাওয়ায় দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে অসুস্থ রিপা আক্তার। অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় বাবা-মা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সাহায্যে সহযোগিতা চাচ্ছেন। যাচ্ছেন মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে। যাচ্ছেন অর্থশালীদের কাছে। তবে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্যে-সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

রিপা আক্তারের মা রুবি বেগম জানান, মেম্বার-চেয়ারম্যান এসেছে অনেক বার। আশ্বাস দিয়েছে অনেক বার। তবে কোন প্রকার সাহায্যে সহযোগিতা এখনো পায়নি। গোয়ালন্দ সমাজ সেবা অফিসে অনেক ঘুরেছি। আমার অসুস্থ্য মেয়ের জন্য একটি কার্ডের ব্যরস্থা করতে পারিনি। তিনি বলেন, একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করতে যে টাকা চেয়েছে সেই টাকা আমার নেই। যে কারণে আমার সন্তানের বয়স ২২ পেরিয়ে গেলেও একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করতে পারিনি। এখন প্রতিবন্ধী কার্ডের আশা ছেড়ে দিয়েছি।

রিপা আক্তারের বাবা চা বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার যা কিছু ছিল এই মেয়ের চিকিৎসায় সব ব্যয় হয়ে গেছে। এখন আমার থাকার মত নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই। অন্যের জমিতে একটি ছাপড়া ঘর তুলে কোন রকম অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

তিনি দুঃখ করে বলেন, নির্বাচনের সময় অনেক মেম্বার-চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর আর কোন যোগাযোগ করেনি। তাদের কাছে গিয়েও কোন সহযোগিতা পাইনি। বরং দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন তপু জানান, সুচিকিৎসার অভাবে রিপা নামের একটি মেয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে। গরীব অসহায় বাবা-মায়ের চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যু যন্ত্রনা সহ্য করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারী সাহায্যে সহযোগিতা পেলে অসহায় বাবা-মায়ের মেয়ে রিপাকে সুচিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। আর সুচিকিৎসা না হলে ঘরের মধ্যে চিকিৎসার অভাবে না খেয়ে মরতে হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের ফিল্ড অফিসার মুহাম্মদ সেলিম সরদার জানান, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৬৮৬জন সুবিধাভোগি রয়েছে। জনপ্রতি প্রতি মাসে ৮৫০টাকা করে সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে প্রতিবন্ধী রিপা কেন সুবিধা পাচ্ছে না সেটা তিনি বলতে পারেনি।

রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, হরমোনের অভাবে অনেক সময় শারীরিক বৃদ্ধি পায় না। যে কারণে রিপা আক্তারের বয়স ২২ পেড়িয়ে গেলেও ৬/৭ বছরের শিশু মনে হচ্ছে। তবে রিপাকে আরো অনেক পূর্বে সুচিকিৎসা করানো প্রয়োজন ছিল। তিনি আরও বলেন, বয়স বেশি হলে তখন শরীর বৃদ্ধি পায় না। সুতরাং রিপা আক্তারের শরীর বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা অনেক কম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com