ঘাসের কারণে আমন চাষাবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থা দেখা গেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের নবগ্রামে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত চার বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে জমিতে ঘাস জন্মায়। ঘাস মরার ওষুধ দিলেও মরেনা। ঘাস পরিষ্কার করা অনেক কষ্টের। একারণে এখানে যে আড়াইশ বিঘা জমি আছে। এ মৌসুমে তার বেশির ভাগই পতিত থাকে।
রাজবাড়ীতে আমন চাষ করতে গিয়ে এ ধরণের নানান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কৃষকরা। কোথাও পাট কাটতে না পারায় ধান রোপণ করতে পারছেনা। কোথাও পানি নেই। আবার কেউ কেউ সার ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের এলাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বিস্তীর্ণ কৃষি জমি। কোথাও ক্ষেত ফাঁকা। কোনো ক্ষেতে রোপণ করা হয়েছে ধান। অনেক ক্ষেতে রয়ে গেছে পাট। কোথাও আবার কৃষকরা পাট কাটছেন।
কৃষক আব্দুস সামাদ প্রামানিকের কাছে আমন ধান চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘চাষাবাদ করে লাভ কী? যখন ক্ষেত থেকে ঘরে ধান ওঠে তখন বাজারে নিয়ে গেলে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। ঘরের ধান ফুরিয়ে গেলেই বাজারে দাম বেড়ে যায়। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাত দিন পরিশ্রম করে লাভটা কী হয়? কৃষকের দুঃখ কেউ বোঝে না।’
কৃষক শুকদেব মন্ডলের সাথে। তিনি জানান, তিনি ছয় পাখি (১৮০ শতাংশ) জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। কিছু জমির পাট কেটে জাগ দিয়েছেন। পানি নেই তাই বাকী পাট কাটতে পারছেন না। আর ক্ষেত থেকে পাট কাটতে পারছেন না বলে আমন ধানও রোপণ করতে পারছেন না। এজন্য খুব অসুবিধায় পড়েছেন আমন চাষাবাদ নিয়ে।
একই ইউনিয়নের নবগ্রামে কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, সরকার সারের দাম বাড়িয়েছে। তেলের দাম বাড়িয়েছে। চাষাবাদ খরচ অনেক পরিমাণ বেড়ে যাবে। এমতাবস্থায় তারা পড়েছেন মহা দুশ্চিন্তায়। টাকা খরচ করে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে শেষে ন্যায্য দাম না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের কৃষক আবু বক্কার জানান, তার দুই একর জমিতে আমন ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় পেলেন সার ও তেলের দাম বৃদ্ধির খবর। বৃষ্টি না থাকায় জমি শুকনা। পানি দিতে হবে বিকল্প উপায়ে। সেক্ষেত্রে চাষাবাদ খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া কৃষি শ্রমিক পাওয়াও দুষ্কর হয়ে গেছে। একজন শ্রমিককে দিনে সাত থেকে আটশ টাকা করে দিতে হয়। সব মিলিয়ে আমন চাষাবাদ নিয়ে তারা খুব সমস্যায় আছেন।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় চলতি বছর ৫০ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
জেলায় তিন ধরনের আমন ধানের আবাদ হয়। উফশী, হাইব্রীড এবং স্থানীয় জাত। এর মধ্যে উফশী আমন ৪৩ হাজার ৩শ হেক্টর, হাইব্রীড ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছ দুই লাখ ৪২ হাজার ৬৪৪ মে.টন ধান। যা গতবারের চেয়ে ২ হাজার মে.টন বেশি।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শহীদ নূর আকবর বলেন, কৃষকরা যে সমস্যার কথা তুলে ধরেছে তা সব সময়ই থাকে।
আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমন ধান রোপণ করা যাবে। এর মধ্যে পাট সব কাটা হয়ে যাবে। বৃষ্টিও নামবে বলে আশা করি। সারের দাম বৃদ্ধির সমস্যার কথা কৃষকরা বলছে সরকারতো আরও ভর্তুকি দিচ্ছে। এটা কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। আমন উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েরেছ তা অর্জন করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।