রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়নের মজলিশপুর চরাঞ্চলে ফের রাসেল ভাইপার সাপের আতংক দেখা দিয়েছে। এতে জমির ফসল তোলা, ও ফসল পরিচর্যা এবং গো-খাদ্য সংগ্রহ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক। পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত মানুষগুলো আতঙ্কে রয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহে এই উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চর মজলিশপুর, চর মহিদাপুর, তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিন জনকে রাসেল ভাইপার সাপ ছোবল দিয়েছে। তাদের তিন জনের মধ্যে দুইজন এখনো ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আর একজন কৃষককে সাপ ছোবল দেয়ায় তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ভর্তি রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অধিকাংশ লোকই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। বেশিরভাগ মানুষের একমাত্র পেশা হলো কৃষি কাজ। কেউ কেউ নিজের জমি, আবার কেউ অন্যের জমি বছরব্যাপী শনকরালি নিয়ে চাষাবাদ করেন। এসব চরাঞ্চলে শত শত বিঘা জমিতে ভুট্টা, বাদাম, তিল, আমন ও আউশ ধানের চাষ করা হয়। কিন্তু ফসলের জমিতে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার দেখা দেওয়ায় বিপাকে রয়েছে কয়েক হাজার কৃষক।
চর কর্ণেশনার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, আমার চাষকৃত ক্ষেতে ওষুধ দিতে গেলে তাকে রাসেল ভাইপার সাপ ছোবল দেয়ার চেষ্টা করলে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি। এখন সাপের ভয়ে ক্ষেতে যেতে সাহস পাচ্ছি না।
চর মজলিসপুরের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, তার ছেলেকে তিন সপ্তাহ আগে মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত থেকে রাসেল ভাইপার সাপ ছোবল দেয়। তখন তাকে সাথে সাথে ফরিদপুর মেডিকেল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ১৫ দিন পরে কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় নিয়ে আসি। তবে এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।
কৃষকরা জানান, গত বছর অধিক পরিমাণে রাসেল ভাইপার সাপের আতংক দেখা দিয়েছিল। তবে মাঝে কয়েক মাস আতংক কম ছিল। কিন্তু সেটা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠ ভর্তি ফসল। সাপের ভয়ে ফসল উত্তোলনের জন্য লোকবল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন থেকেই যদি একটা ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে আমরা যারা কৃষক রয়েছি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, রাসেল ভাইপার নিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে যেহেতু সাপের উপদ্রব বেড়েছে সেজন্য খুব দ্রুত চরাঞ্চলে গিয়ে সচেতনতামূলক উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হবে। যেখানে মানুষকে সতর্কতা ও করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ওই এলাকার কৃষকদের সুরক্ষা এবং ফসল উত্তোলনের জন্য গামবুট, হ্যান্ড গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।