বাঙালির গৌরবের দুই শীর্ষবিন্দু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজবাড়ীতে ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনায় এমন কথাই বলেন বক্তারা। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সিদ্ধার্থ ভৌমিকের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম, জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতীম দাস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাঙালির গৌরবের দুই শীর্ষবিন্দু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এক অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, চিত্রকলা যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। অন্যদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালির যে দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রসাধনা তার বাস্তব রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছেন। এই পৃথিবী যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন বাঙালি শ্রদ্ধাভরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করবে।
বক্তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ উভয়ে ছিলেন পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের অপ্রিয়। রবীন্দ্রবিরোধী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সম্পর্কে কোনো আলোচনা করতে আগ্রহী ছিল না। তাদের কাছে রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয়ই মুখ্য ছিল। তাঁর রচনারীতি, চিন্তন, দর্শন তাদের কাছে তাই উপেক্ষার শিকার হয়। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছেন যে, কবিগুরু তাঁর অনেক লেখার মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের বিদ্বেষপূর্ণ ও বৈষম্যপূর্ণ সম্পর্ক দূর করার জন্য চেষ্টা করেছেন। সাবধান করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ধনশালী ও নেতৃস্থানীয় মানুষকে। রবীন্দ্রনাথ কখনও সক্রিয় রাজনীতি করেননি। তবে ব্রিটিশ ভারতে তিনি একেবারে অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়ে বসে থাকেননি। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে নানা সময় প্রতিবাদমুখর ছিলেন। বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে আজীবন লালন করেছেন। রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতিতে তিনি রবীন্দ্রনাথকে বারবার স্মরণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের আদর্শ দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। এমনকি রবীন্দ্র-রচনাই ছিল তাঁর প্রেরণা। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতা, বিবৃতি, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বারবার সে কথা তুলে ধরেছেন। যখনই রবীন্দ্রনাথের অপমান, অবজ্ঞার সূত্রপাত হয়েছে, বঙ্গবন্ধু কঠোরভাবে তাঁর সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের রবীন্দ্র-বিরোধিতাকে তিনি কখনও মেনে নিতে পারেননি।