বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

রাজবাড়ী হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৭৮ Time View

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়েছিল দুদিন পর ১৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে পাক বাহিনী রাজবাড়ী ছেড়ে চলে গেলেও বিহারী ও মিলিশিয়া বাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর ৭দিন সম্মুখ যুদ্ধ চলে। ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে বিহারীরা আত্মসমর্পন করার পর রাজবাড়ীকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি গ্রুপ ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে অস্ত্রসহ রাজবাড়ীতে প্রবেশ করে। ওই মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি ব্রিজ উড়িয়ে ফেলে এবং রাস্তা ভেঙ্গে দেয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা একে একে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্পগুলো দখল করতে থাকে। ২২ নভেম্বর এমনই একটি অপারেশন চালানোর সময় মুক্তিযোদ্ধা খুশী শহীদ হন। পাক সেনা ও তাদের দোসররা তার লাশ ট্রাকের সাথে বেঁধে টেনে হিচড়ে নিয়ে শহর জুড়ে বিজয় উল্লাস করে। এ ঘটনায় রাজবাড়ী জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা কিছুটা কমে যায়। এসুযোগে স্থানীয় বিহারী ও রাজাকাররা ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ ও বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। রাজবাড়ীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ আরো বেগবান করার জন্য যৌথ কমান্ড গঠন করে পাক সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর সকল ইউনিট ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকবাহিনী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তবে প্রায় ৫ হাজার সশস্ত্র বিহারীর সাথে তখনও মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ চলছিল। এ সময়ে যশোর থেকে আকবর হোসেনের নেতৃত্বে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজবাড়ী এসে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেন। ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশ শত্রুমুক্ত হলেও রাজবাড়ী তখনও ছিল বিহারীর্দে শক্ত ঘাঁটি। এ কারণে তারা শহরের প্রধান প্রধান এলাকা নিউকলোনী ও লোকোসেড কলোনীতে বড় বড় বাংকার তৈরি করে ছয় মাসের খাবার এবং গোলাবারুদ সহ অবস্থান গ্রহণ করেন। রাজবাড়ীতে অবাঙালিদের প্রধান সৈয়দ খামার ঈশ্বরদী ও সৈয়দপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত প্রায় ১০ হাজার অবাঙালি বিহারীদের এনে নিউ কলোনী এবং লোকোসেড কলোনীতে জড়ো করে। পাকহানাদার বাহিনীর কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্র সংগ্রহ করে শত্রুবাহিনী দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তোলে। সারা দেশ যখন বিজয়ের আনন্দে উল্লসিত, সৈয়দ খামারের জল্লাদ বাহিনী তখনও স্টেশন রোডের টর্চার সেলে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরপর রাজবাড়ীর আকুয়ার বিল্ডিংয়ে নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে নির্মম অত্যাচার করা হতো। অনেককে জবাই করেও হত্যা করা হয়েছে। এ অত্যাচারের বিবরণ শুনে আজও শিউরে ওঠে মানুষ। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আশপাশের প্রায় সব এলাকা শত্রুমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা রাজবাড়ী থানা, পুলিশ ক্যাম্প ও ট্রেজারী অফিস লুট করে প্রচুর অস্ত্র সস্ত্র উদ্ধার করলেও শহরের উত্তর দিকে রেলওয়ে নিউকলোনী ও লোকোসেড কলোনী শত্রু ঘাঁটি দখলে আনতে পারছিল না। অবশেষে মাগুড়ার ক্যাপ্টেন জামান বাহিনী, শ্রীপুরের আকবর বাহিনী, মাচপাড়ার মতিন বাহিনী, পাংশার মালেক ও কমান্ডার সাচ্চু বাহিনী এবং গোয়ালন্দ মহকুমা কমান্ডার শহীদুন্নবী আলমের বাহিনী যৌথভাবে শহরের চর্তুদিক থেকে বিহারীদের কথিত মিনি ক্যান্টনমেন্ট নিউকলোনী, আটাশকলোনী ও লোকোসেড কলোনীর উপর সাড়াশী আক্রমণ চালায়। ১৪ডিসেম্বর থেকে লাগাতার আক্রমণের ভেতর দিয়ে শহীদ রফিক, শফিক, সাদিক, শুকুর, দিয়ানত, জয়নাল মোল্লা, আরশেদ আলী, জাহাঙ্গীর এবং আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধার জীবনের বিনিময়ে অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে শত্রুমুক্ত হয় রাজবাড়ী।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com