কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছো। গ্রামীন এই খেলাটি এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিলো।
দল বেঁধে এ খেলা খেলতে হতো। এ খেলায় কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে দেয়া হয়, সে অন্য বন্ধুদের ধরতে চেষ্টা করে। যার চোখ বাঁধা হয় সে হয় ‘কানা’। অন্যরা ‘মাছি’র মতো তার চারদিক ঘিরে কানামাছি ছড়া বলতে বলতে তার গায়ে টোকা দেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় সে অন্যদের ধরার চেষ্টা করে। সে যদি কাউকে ধরতে পারে এবং বলতে পারে তার নাম তবে ধৃত ব্যক্তিকে কানা সাজতে হয়।কানামাছির ‘কানা’ মানে কিন্তু দিনকানা রাতকানা ধরণের কিছু নয়। দিব্যি চোখে দেখতে পাওয়া একজন মানুষ। কিন্তু খেলার শুরুতে যখন বটে নাওয়া হয়েছে, সেই পদ্ধতিতে সে ‘কানা’ নির্বাচিত হয়েছেন। বটে নেওয়ার বিষয়টাও খুব মজার।
বটে নাওয়ার সাধারণ অর্থ হলো একজনকে বেছে নেওয়া। এই বাছাই প্রক্রিয়ার নাম ‘বটা’ বা বেটে । বটতে হলে একটা ছড়া জানা চাই। ছড়াগুলোও খুব মজার। যেমন,
আকাশ থেকে নেমে এলো ছোট্ট একটি প্লেন,
সেই প্লেনে বসে ছিল লাল টুকটুক মেম।
মেম কে আমি জিজ্ঞেস করলাম যিধঃ রং what is your name ? হোয়াট ইজ ইওর নেম?
মেম আমাকে উত্তর দিলো, my name is, মাই নেম ইজ
সুস মি তা সেন।
অথবা
উবু দশ কুড়ি নাড়ি-ভুরি
চিংড়ি মাছের চর চরি
কে কত আনা দেবে
বলে দাও না
ভাই বো নে রা।
আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এলাকাভিত্তিক গ্রাম্য খেলাগুলো এক সময় খুবই জনপ্রিয় ছিল।
এসব খেলাতেই শৈশবের দুরন্তপনায় মেতে থাকতো ছেলে-মেয়েরা। ইলেক্ট্রনিকস আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যগত লোকজ খেলাগুলো সে গুলো বিলুপ্তির পথে। গ্রামীন খেলাগুলো না থাকার কারনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে আনন্দ উদ্দীপনা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রজন্মকে ক্রমেই ঠেলে দিচ্ছে মাদকের দিকে। দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম হচ্ছে মেধাশূন্য। হয়ে পড়ছে গোত্রহীন, একাতীত্ব জীবন গড়ে ওঠার ফলে দেখা দিচ্ছে নানান মনোবৌকল্য। খেলাধুলা ও শরীরচর্চা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর চিন্তার সৃজনশীল বিকাশ ঘটে, নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জিত হয়, জয়-পরাজয় মেনে নেওয়ার সাহস বাড়ে, দেশপ্রেম জাগ্রত হয় এবং নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটে। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমে যায়। বাংলাদেশে ষড়ঋতুর প্রভাবে রয়েছে ঋতু ভিত্তিক খেলাধুলার প্রচলনও। যেমন- বর্ষাকালে নৌকা বাইচ, গ্রীষ্মকালে ঘোড়দৌড়, গরুর গাড়ির দৌড়, শীতকালে গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবাধা খেলার জমজমাট আড্ডা। এছাড়া প্রাচীন যুগ থেকে প্রচলিত খেলাগুলির মধ্যে রয়েছে- হাডুডু, বৌ-চি, দড়িলাফ, পাঁচগুটি, কানামাছি, এক্কাদোক্কা, সাতচাড়া, ডাংগুলি, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, লুডু, মার্বেল, টোক্কাটুক্কি, হাড়িভাঙ্গা, কাঠিছোঁয়া, চোর ডাকাত, দড়ি টানাটানি, চেয়ার সিটিং, রুমাল চুরি, তৈলাক্ত বাঁশে উঠা, গুলতিছোড়া, ইচিংবিচিং, মাংসচোর, ওপেন্টি বাইস্কোপ, বস্তাদৌড়, বলিখেলা, বালিশ যুদ্ধ, কুতকুত, লাটিম খেলা ইত্যাদি। নাগরিক নানান অসুবিধার মধ্যে শিশুরা বেড়ে উঠছে। তাদের খেলার মাঠ নেই। স্কুলের সীমাবদ্ধ গন্ডির মধ্যে বেড়ে ওঠা জীবনে ফ্লাট বাসার জায়গাটুকুই তাদের জীবন। সেটাও এখন ছোট হতে হতে মোবাইলের ডিসপ্লের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ছে।