৪২ ইউনিয়ন, ৩টি পৌরসভা ও ৫টি উপজেলা নিয়ে রাজবাড়ী জেলা গঠিত। এই জেলায় ৮০শতাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। জেলার প্রতিটি এলাকায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহী। লাভ-লোকসান কাটিয়ে প্রতিবছর পাট চাষ করেন জেলার ৯০ শতাংশ কৃষক। পাটের বাম্পার ফলনও হয়। তবে “সোনালী আঁশের, রূপালী পাঠকাঠি”র কদর থাকায় কৃষক লাভবান হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে, পানির অভাবে জেলার ৩০ শতাংশ পাট নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্ত পাটকাঠিতে লাভের আশা করছেন এই জেলার সাধারণ কৃষক।
গত কয়েক বছর যাবৎ পাটকাঠির চাহিদা হওয়ায় সুদিন ফিরেছে। সুতরাং পাট ও পাটকাঠির উভয় মূল্যে পাওয়ায় লাভবান হচ্ছে সাধারণ কৃষক। এতে প্রতি বছর কৃষক পাট চাষে আগ্রহীও হচ্ছে।
বালিয়াকান্দি ইসলামপুর এলাকার পাট চাষী রস্তম আলী বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে কৃষি কাজের সাথে আছি। পাটও প্রতিবছর চাষ করি। কিন্ত এক সময় পাটকাঠি ফেলে দেওয়া হতো। বর্তমান বাজারে পাটের চেয়ে পাটকাঠির চাহিদা বেশি পাওয়ায় আমরা বেশি লাভবান হতে পারছি। তিনি আরোও বলেন, পাটকাঠি শুকানোর জন্য বাড়ীর আঙ্গিনা, কাঁচা-পাকা রাস্তা, মাঠে-ঘাটে সারি সারি দিয়ে রাখা হয়েছে। পাটের মত পাটকাঠিও ভাল ভাবে পরিচর্যা করে বাজারজাত করা হয়। একটি সময় পাটকাঠি শুধু জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনজ্জামান বলেন, পাটকাঠির ছাই থেকে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক ভালো একটা বিষয়। বিশ্ব বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একাধিক পাটকাঠি ব্যবসায়ী বলেন, ৭/৮ বছর যাবৎ পাটকাঠির ব্যবসা করি। রাজবাড়ী অঞ্চল থেকে পাটকাঠি ক্রয় করে যশোর, সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হতো। এখন রাজবাড়ীতে একাধিক কার্বন ফ্যাক্টরী গড়ে উঠেছে। সুতরাং জেলার পাটকাঠি স্থানীয় ফ্যাক্টরীতে নিয়ে থাকে। তবে দিন দিন পাটকাঠির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এসএম সহীদ নূর জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় ৩ লাখ, ৭৪ হাজার ১১৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সেই হিসেবে রাজবাড়ীতে এবার ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ১৫০ মণ পাট উৎপাদন হবে রাজবাড়ী জেলায়। তিনি বলেন, পাটের যেমন মূল্যে পাচ্ছে কৃষক। ঠিক পাটকাঠিতেও মূল্যে পাচ্ছে। এতে প্রতিটি কৃষক অধিক লাভবান হচ্ছে। এতে রাজবাড়ী জেলায় দিন দিন পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক।