বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫০ অপরাহ্ন

৫২’র ভাষা আন্দোলনে রাজবাড়ী জেলা

নেহাল আহমেদ ॥
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৯০ Time View

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একটি বিশেষ ঘটনা। বলা যায়, পাকিস্তানের পরবর্তী ঘটনা-প্রবাহের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বিশেষ প্রভাব ফেলে। ‘৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হবার সময় থেকেই বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্রসমাজ বাংলা ভাষার বিষয় নিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলেন।

কিন্তু পাকিস্তানি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এ বিষয়ে মোটেও আন্তরিক ছিলেন না। তারা উল্টো উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। সুতরাং অনিবার্য ভাবেই সংকট সৃষ্টি হয়। এরই চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ১৯৫২ সালের রক্তাক্ত ঘটনা প্রবাহ।

সারা দেশের মত রাজবাড়ী জেলার সন্তানরা এগিয়ে এসেছিলো মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার করার সংগ্রামে। রাজবাড়ী ছেলে আবুল কাশেম (কার্টুনিস্ট) তখন বাংলা অক্ষর তাড়াও এঁকে দারুণ প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক কাজী আবুল কাসেম তার আঁকা ‘হরফ খেদাও’ কার্টুন চিত্রটির কারণে সারা পৃথিবীতে এখনো স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

রাজবাড়ী আরেক কৃতি সন্তান অধ্যাপক আব্দুল গফুর (একুশে পদকপ্রাপ্ত) যিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রথম তিন জন ছাত্র ছাত্রীর একজন। তার নাম রাজবাড়ী জেলায় কোন অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হতে দেখেনি। অথচ ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ।

রাজবাড়ীর সন্তান কাজী মোতাহার হোসেন। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিস একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার নাম ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু। এই পুস্তিকার লেখক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমেদ এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম (তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক) বাংলা ভাষাকে পূর্ব বাংলায় ভাব বিনিময়, অফিস ও আদালতের একমাত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরা হয়ে ছিলো।

অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এবং সেই আলোকে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদৃঢ় ভিত গড়ে তোলার জন্য তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অনেক রাজবাড়ীর সন্তানেরা। শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবীতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলার ভাষা সৈনিকদের নিয়ে রাজবাড়ীতে কোন কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

মহান ভাষা আন্দোলনের রাজবাড়ী জেলায় বিদগ্ধ ও গুণী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলন অংশগ্রহণকারী ভাষা সৈনিকদের নাম ড. কাজী মোতাহার হোসেন (বাগমারা পাংশা), অধ্যপক আব্দুর গফুর (দাদপুর, বেলগাছি), অ্যড. আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী কাটাখালী, বরাট), সামছুল আলম চৌধুরী (রাজবাড়ী সদর), অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ কায়েম উদ্দিন, (রাজবাড়ী সদর), হামিদুল হক ভোলা মিয়া (সজ্জনকান্দা, রাজবাড়ী), অধ্যক্ষ বদোরুদ্দোজা টুকু মিয়া (সুর্য নগর, রাজবাড়ী), মুন্সি মো. তফাজ্জল হোসেন (পাকুরিয়া, পাংশা), কাজী মোতাহার হোসেন ভাষা আন্দোলনের ভিত রচনা করেন। অধ্যাপক আব্দুল গফুর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা এবং সৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক থাকায় তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হলে তিনি তিন মাস পলাতক থাকেন। অ্যড. আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনে যোগদান করে হাতের তালুতে গুলি লেগে আহত হন। অ্যড. সামছুল আলম এবং অধ্যক্ষ মিয়া মো. কায়েম উদ্দিন ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় ঐদিন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বদরোদ্দোজা টুকু মিয়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হামিদুর হক ভোলা মিয়া মিছিলে অংশগ্রহণ করায় গ্রেফতার হন। মুন্সি তোফাজ্জল হোসেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় গোপনে ছাত্রদের অর্থ সহায়তা এবং নানাভাবে সংশিষ্ট হওয়ার তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালে বিচার শুরু হলে মাতৃভাষার পক্ষে জোড়ালো বক্তব্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করায় তিনি অব্যাহতি পান। ২৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় নিরাপরাধ ছাত্র ও জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে রাজবাড়ী শহরের মানুষ ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারী বিক্ষোভে একেএম আসজাদ, সমর সিংহ, হাবিবুর রহমান প্রমূখ নেতৃত্বে ২৪ ফেব্রুয়ারী ৬/৭ হাজার মানুষ আজাদী ময়দানে সমবেত হন। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তারা ডানলফ হলে বর্তমানে চিত্রা হলে মিলিত হন। এ প্রসঙ্গে দৈনিক পত্রিকা ১৯৫২-১৬ মার্চ প্রতিবেদন ২১-ও ২২ ফেব্রুয়ারী তারিখ ঢাকায় নিরীহ ও নিরপরাধ ছাত্র ও জনসাধারণের উপর পুলিশের অমানুষিক গুলি বর্ষণের সংবাদ এই মহকুমার সর্বত্র স্কুল ও হাট বাজার বন্ধ রাখা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com