আব্দুল গণি (৪৫) গত ২০ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করতেন। স্ত্রী ও ছেলেও আব্দুল গনির সাথে ঢাকাতে থাকতেন। চার বছর আগে ২য় সন্তানের জন্মের পর স্ত্রী গ্রামে চলে আসেন। গ্রামের বাড়ীতে স্ত্রী আর চার বছর বয়সী মেয়ে থাকে। গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাড্ডার ভাড়া বাসা থেকে গণি কাজে যাবার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়েছিল। পরে স্থানীয় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। আব্দুল গণির বাড়ী রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে। সম্প্রতি গনি সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় বাড়ী করেছে। গত শুক্রবার রহিমপুরে গ্রামের বাড়ীতে আব্দুল গণির স্মরণে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, গত ২১ জুলাই রবিবার বিকেলে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ৮ টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। আবদুল গণির মৃত্যুতে স্ত্রী লাকি আক্তার, ছেলে আলামিন শেখ ও চার বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল আব্দুল গনি।
গণির স্ত্রী লাকী আক্তার জানান, দীর্ঘ বছর আমার স্বামী ঢাকাতে থাকে। আগে আমিও ছিলাম। আমার ২য় সন্তানের জন্মের পর গ্রামে চলে আসি। গত শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশানে তার কর্মস্থল আবাসিক হোটেল সিক্স সিজন যাচ্ছিলেন। পথে হোটেলের মাঝামাঝি স্থানের গুলশান শাহজাদপুর বাঁশতলায় গেলে আন্দোলনের মধ্যে পড়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়। ১০ টার দিকে আমার শ^শুর ফোন করে জানায় গনির মাথায় গুলি লাগছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছে। আমি আমার ছেলেকে জানালে হাসপাতালে গিয়ে দেখে মরদেহ পড়ে আছে। আমার স্বামী কোন রাজনীতি করতো না। সে মারা যাওয়াতে আমি দুটি সন্তান নিয়ে এখন মাঝ সমুদ্রে পড়েছি। এলাকায় এনজিও থেকে ঋণ নেয়া আছে। কিস্তি দিব কী করে আর খেয়ে বাঁচবে কী ভাবে। আর আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাইবো কার কাছে।
আব্দুল গণির ছেলে আলামিন শেখ জানান, এসএসসি পাশের পরে বাবা আমাকে ঢাকা নিয়ে যায়। সেখানে আমি শেফের কাজ শিখছি। বাবার সাথে একই বাসাতে থাকতাম। আমার ঐ দিন নাইট ছিল। সকালে এসে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল ১০ টার দিকে মা ফোন দিয়ে বলে তোর বাবার খবর নে। মাথায় গুলি লেগেছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ পেয়েছি বাবার। আমি এখনও বেকার। বাড়ীতে মা আর ছোট বোন। বাবাকে হাড়িয়ে আমাদের এখন বড় অসহায় অবস্থায় পড়েছি।
আবদুল গণির বড় ভাই আবদুল রাজ্জাক শেখ বলেন, আমার ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। আমার ভাই ঢাকায় হোটেলে কাজ করে সংসার চালাতো। সে তার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।আমার ভাইয়ের দুই সন্তান এতিম হয়ে গেলো। এই পরিবারের দায়িত্ব এখন কে নেবে।
ছবি ক্যাপশান : ছেলের সাথে আব্দুল গনি। এ ছবি কেবলই স্মৃতি