সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শিশুদের চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজবাড়ীতে। কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে সকালে জেলা শিল্পকলা এতাডেমি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম, রাজবাড়ী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক রুবায়েত মো. ফেরদৌস, মহিলা বিষয়ক অধিধপ্তরের উপ পরিচালক ্আজমীর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন উদ্দিন বতু, রাজবাড়ীর সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, সেভ দ্য চিলড্রেনের রাজবাড়ী অঞ্চলের ব্যবস্থাপক সেলিম হোসেন, কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থারর সহকারী নির্বাহী পরিচালক ফকীর জাহিদুল ইসলাম রুমন প্রমুুখ।
এ প্রদর্শনীতে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ঢাকার সেফ হোমে বসবাসরত শিশুদের নিজের হাতে আঁকা ৬৬ টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। যেখানে শিশুদের জীবনযাপন ও অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, কেকেএস সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে যে কর্মকান্ডগুলো পরিচালনা করছে তা প্রশংসার দাবিদার। আজকের অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত ছবিগুলোর মাধ্যমে শিশুদের মনের প্রতিচ্ছবিগুলো ফুটে উঠেছে। সমাজের সকলের সহযোগিতা নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। শিশুদের এমন প্রতিভা প্রকাশের জন্য কেকেএস এবং দি ফ্রিডম ফান্ডকে ধন্যবাদ জানাই।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার জি.এম. আবুল কালাম আজাদ বলেন এ ধরনের উদ্যোগ আরো বেশি বেশি প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। এই শিশুদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য আমাদের সকলের ভূমিকা থাকা খুব প্রয়োজন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রেজাউল করিম বলেন সকলের মৌলিক চাহিদা রাষ্ট্র দিতে বাধ্য। সকলেরই আছে পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্য কেকেএস সেফ হোম এর বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করছি। শিশুদের অধিকার রক্ষায় জেলা পুলিশ সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যাতে অনুকূল পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজমীর হোসেন বলেন, এমন সুন্দর চিত্রকর্মগুলো যদি বিশেষ শিশুদের দ্বারা হয় তা প্রশংসার দাবিদার। এগুলো শুধু চিত্রকর্ম নয় এগুলো তাদের মনের অনুভূতি। কেকেএস রাজবাড়ী জেলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে আসছে এবং শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কেকেএস সবসময় কাজ করে আসছে। তাদের শিক্ষা ও সমাজের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে কেকেএস বিভিন্ন প্রজেক্ট এর মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় কেকেএস সেফ হোম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবহেলিত শিশুদের উন্নত আধুনিক সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। কেকেএস সমাজ উন্নয়নে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী বে সরকারি সংস্থা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংস্থাটি শিশুদের প্রতি যৌন শোষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিশু পাচার রোধ, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মরোধসহ শিশুদের সরকারি-বেসরকারি সেবাপ্রাপ্তি সুনিশ্চিতকরণে নানাবিধ সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে শিশুদের বাণিজ্যিক যৌন শোষণ ও পাচারের বিপক্ষে জন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কেকেএস পথে বসবাসরত ও পাচারের ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম নিয়ে এই চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
ইনসিডিন বাংলাদেশ, ঢাকা, শাপলা মহিলা সংস্থা (এসএমএস), ফরিদপুর ও কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস), রাজবাড়ী এর অংশগ্রহণে সেফহোমে বসবাসরত যৌনপল্লীর শিশু ও পথে বসবাসরত পাচারের ঝুঁকিতে থাকা ৬৬জন শিশুর ৬৬টি ছবি প্রদর্শিত হয়েছে।
সূচনা বক্তব্যে আয়োজক কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার সহকারী নির্বাহী পরিচালক ফকীর জাহিদুল ইসলাম রুমন বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর শিশুদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তারই ফলশ্রুতিতে এ পর্যন্ত ১৩৫ জনকে মূলধারায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। যারা এখন স্বাবলম্বী। এখন যারা সেফহোমে বেড়ে উঠছে তারাও একদিন মূলধারায় যুক্ত হবে- এটাই তাদের আশা।