শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

না ফেরার দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদের খান

শহিদুল ইসলাম , কালুখালী ॥
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৯৩ Time View

না ফেরার দেশে পারি জমালেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদের হোসেন খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর। একজন নাদের হোসেন খান একাধিক ইতিহাসের নায়ক, সমাজ সেবক, একজনমে ৩ রাষ্ট্রের নাগরিক, বর্ণাঢ্য জীবনের এক কর্ম উদ্দীপ্ত সৈনিক। রবিবার দুপুরে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি..রাজিউন)।

১৯২৯ সালে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহাকুমারের পাতুরিয়া গ্রামে গড়াই নদীর কুলের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে নাদের হোসেন খানের জন্ম। তার বাবার নাম সৈয়দ আলী খান। উত্তাল গড়াই নদীর ভাঙ্গাগড়ার খেলা দেখে নাদের হোসেন খানের শৈশব শুরু। হয়তো এ দৃশ্যই তার জীবনযুদ্ধে সাহসীকতার অনুপ্রেরনা। নাদের হোসেন খানের বয়স যখন ১৬। এসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সকলের যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় পিতা সৈয়দ আলী খানের হাত ধরে নাদের খানকেও সেই যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষন নিতে হয়। এরই মাঝে জাপানের হিরোশিমা আক্রমন হলে থেমে যায় যুদ্ধের দামামা। ঘরে ফিরে আসেন নাদের খান ও তার পিতা। ১৯৪৬ সালে উপমহাদেশ জুড়ে শুরু হয় তেভাগা আন্দোলন। হাজী মো: দানেশ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পিতা সৈয়দ আলী খানের হাত ধরে নাদের খানও দেখা করেন হাজী সাহেবের সাথে। এই আন্দোলনে যোগ দেন নাদের খান। ১৯৪৮ সালে দেশ ভাগের ৪ বছর পরই শুরু হয় ভাষা আন্দোলন । ভাষার জন্য গোয়ালন্দ মহাকুমারে প্রত্যন্ত পাড়াগাঁয়ের কর্মী হিসেবে ঢাকায় যান নাদের খান। এরপর ৬ দফাসহ সকল আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাতুরিয়া থেকেই তিনিই ১ম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কালুখালীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আকামত আলী জানান, যশোরের আকবর বাহিনী ও নবুয়ত বাহিনী যুদ্ধকালীন সময় সাহসীকতার সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করতো। ওই দুই বাহিনীর অন্যতম সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করতো বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদের খান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদের খানের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তার পুত্র আকমল হোসেন খান জানান, রেলমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদের খানই পাতুরিয়ার ১ম মুক্তিযোদ্ধা । তার ডাকে এই এলাকার সকল যুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিযোদ্ধা নাদের খান মৃগী বাজারের ১ম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার হাতের ছোয়ায় এলাকায় বহু স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভুলে তিনি সব শ্রেনী পেশার মানুষকে ভালোবাসতেন। এজন্য মানুষ তাকে ভালোবেসে মিয়া ভাই বলে ডাকতেন। অনেকে ভুলেই গিয়েছিলো তার আসল নাম নাদের খান।

সোমবার সকালে নিজ হাতে গড়া পাতুরিয়া মাদরাসা মাঠে মিয়া ভাই খ্যাত নাদের খানের লাশ দেখতে হাজারো জনতার ঢল নামে। এরই মাঝে জেলা পুলিশ তাকে গার্ড অপ অনার প্রদান করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে। এসময় কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান আব্দুল্লা আল মামুন, কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসাইন, কালুখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আকামত আলী, সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম আলী, পাট্টা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, আকমল হোসেন খান, শহীদ দিয়ানত আলী কলেজের সহ.অধ্যাপক হারনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com