রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালীতে অনুষ্ঠিত হলো চড়ক পূজা। এ উপলক্ষে বসেছিল বৈশাখী মেলা। প্রায় দুইশ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ চড়ক পূজা। মেলা ও চড়ক পূজা দেখতে ভিড় জমিয়েছিল হাজার হাজার নারী পুরুষ। প্রতি পহেলা বৈশাখে রাজবাড়ীর ছোটভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালি এলাকায় প্রেমচরণ ফকীরের বাড়ীতে বৈশাখী মেলা ও চরক পূজার আয়োজন করা হয়। তবে গত দুই বছর সারাদেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখের সকাল থেকে দিনব্যাপী মেলা ও পূজার আয়োজন করা হয়। সারাদিন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ মেলায় উপস্থিত হয়ে মেলা পরিদর্শন করেন। মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে হরেক রকমের জিনিস পত্র নিয়ে পসরা বসিয়ে আছেন অনেকে। মেলায় উপস্থিত নারী-পুরুষ পছন্দমত আসবাব-পত্র এবং হরেক রকমের খাবার কিনছে।
বিকেলে মেলার ও পূজার বিশেষ আর্কষণ পিঠে বড়শি লাগিয়ে ঘুরানো। পিঠে বড়শি লাগিয়ে ঘুরানোর পূর্বে চরক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চড়ক পূজার আগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালী, শীতলা এবং বুড়ি দেবীর পূঁজা করা হয়। স্থানীয় ভাষায় এ মেলাকে বলা হয় পিঠফোঁড়া মেলা। মেলায় পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে এসেছেন ভরত চন্দ্র মন্ডল। তিনি বলেন, মায়ের কোলে চরে এই মেলায় এসেছি। প্রতিবছর আসি পরিবারের সকলের নিয়ে। এই মেলা আমাদের পরিবার ও এলাকাবাসীর জন্য একটি উৎসব। এই মেলার অপেক্ষায় আমরা থাকি। তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা বন্ধ ছিল। এবার পুনরায় শুরু হয়েছে। এতে সকলের ভাল লাগছে। এসময় ষাটোর্ধ মায়া রানী পাল নামের এক নারী বলেন, বাবার সাথে এই মেলায় এসে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস-পত্র বিক্রি করতাম। জীবনের শেষ বয়সে এসে নাতির সাথে এসে মাটির তৈরি জিনিস পত্র বিক্রি করছি। এই নারী আরও বলেন, এই মেলা রাজবাড়ী বাসীর একটি বিশেষ উৎসব। কারণ এই মেলায় মুসলিম ও হিন্দুরা সবাই উপস্থিত থাকে এবং উৎসব পালন করে।
প্রেমচরণ ফকীর বাড়ীর এক সদস্য বাবু ফকীর জানান, এই উৎসব শুধু আমাদের পরিবারের নয়। এই উৎসব সারাদেশের। তিনি বলেন, এই মেলায় কোন প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথি নেই। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য উম্মুক্ত। যে কারণে এলাকার মুসলিম-হিন্দু সকলে সার্বিক সহযোগিতা করেন। এলাকার সকলের সহযোগিতা করার কারণে এত বড় মেলায় কোন প্রকার সমস্যা তৈরি হয় না। মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাদল ফকির জানান, চড়ক পুজা রাজবাড়ীবাসীর কাছে প্রাণের উৎসব। তিনি বলেন, যাদের বড়শী বিধিয়ে চড়কীতে ঘোরানো হয় তারা এক সপ্তাহ যাবৎ উপবাস করে থাকেন। মেলা উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভিড় জমতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে চড়ক মেলাকে কেন্দ্র করে মেলায় রকমারি দোকান বসে। তিনি আরো বলেন, এই মেলায় অসংখ্য বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ উপস্থিত থাকলেও শান্তিপূর্ন ভাবে এই মেলায় অনুষ্ঠিত হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সি জানান, প্রেমচরন ফকীরের বাড়ীর এই চরক পূঁজা ও বৈশাখী মেলায় ছোট বেলা বাবার কাঁধে চড়ে আসতাম। এখনও আসি। এই মেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ উপস্থিত হয়। সকলে হান্তি পূর্ন ভাবে এই মেলা উপভোগ করে চলে যায়।