রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দিনদুপুরে পদ্মা নদীতে গরু ব্যবসায়ীদের বহনকারী একটি ট্রলারে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সশস্ত্র ডাকাতদল স্পিডবোটে এসে ট্রলারে হানা দিয়ে বেশ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা লুটে নেয়। এ সময় ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের হামলায় অন্তত ৫ জন আহত হন। ডাকাতদের হাত থেকে জীবন ও অর্থ বাঁচাতে নদীতে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন একজন। মঙ্গলবার বিকেল ৩ টার দিকে দৌলতদিয়ার পাঁচ নম্বর ফেরিঘাটের কাছাকাছি এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
গরু ব্যাবসায়ী মো. রফিক মন্ডল জানান, জীবন ও অর্থ বাঁচাতে তিনি এবং দুলাল পাল নামে তাদের এক সহযাত্রী নদীতে ঝাঁপ দেন। এ সময় তার কাছে গামছায় বাঁধা ৩ লক্ষ টাকা ছিল। আমি কোন মতে সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছি। তবে গামছায় বাঁধা টাকা পানিতে হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু দুলাল পাল উঠতে পারেননি। তাকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। তার কাছে আড়াই লক্ষাধিক টাকা ছিল। তাদের দুজনেরই বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের আটদাপনিয়া এলাকায় বলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে , মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ট্রলার বোঝাই করে অনেকগুলো গরু নিয়ে ব্যবসায়ীরা মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট সংলগ্ন আরিচা গরুর হাটে বিক্রি করতে যান। বেচাকেনা শেষ করে ৪০/৪৫ জনের ব্যবসায়ী দল দুপুর দেড়টার দিকে আরিচা ঘাট থেকে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ওই ট্রলারেই রওনা দেন। বেলা ৩ টার দিকে ট্রলারটি দৌলতদিয়া পাঁচ নম্বর ফেরিঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালে ১৫/২০ জনের একটা ডাকাত দল স্পিডবোট যোগে পাবনার দিক থেকে এসে তাদের ট্রলারের সাথে ভেড়ে।
এ সময় তারা ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ট্রলারে থাকা ব্যবসায়ীদের এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে তারা সবার কাছ থেকে টাকা লুট করে নিয়ে ফরিদপুরের দিকে চলে যায়। প্রায় ১৫/২০ মিনিট ধরে চলে এ ডাকাতি। এ সময় ব্যবসায়ীরা চিৎকার করলেও কোন ট্রলার, লঞ্চ বা ফেরি তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যায়নি।
ফেরি ঘাটের ওষুধ ব্যাবসায়ী আলিয়ার রহমান জানান, দিনদুপুরে পদ্মা নদীতে এ রকম ভয়ংকর ডাকাতির ঘটনা এ এলাকায় আগে কখনো তারা ঘটতে দেখেননি বা শোনেননি। তারা বহু মানুষ ঘাটে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখলেও কারো কিছু করার ছিল না।
ডাকাতির শিকার রাজবাড়ীর সূর্যনগর এলাকার ব্যাবসায়ী লোকমান মোল্লা (৬০) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, তার কাছে থাকা গরু বিক্রির ৫ লক্ষাধিক টাকা ডাকাতেরা ছিনিয়ে নিয়েছে। অন্যদের কোপানো দেখে আমি প্রাণ ভয়ে টাকাগুলো দিয়ে দেই। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
বানিবহ ইউনিয়নের মহিষ বাথান এলাকার ব্যাবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যাবসা করি ভাই। ডাকাতেরা আমার সব পুঁজি নিয়ে গেছে। এখন কিস্তি পরিশোধ করব কিভাবে। বৌ-বাচ্চাগোরে খাওয়ামু কি?
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, খবর পাওয়া মাত্রই তারা একটি স্পীডবোট নিয়ে ডাকাতদের পিছু ধাওয়া করেন। তবে মাওয়ার কাঁঠাল বাড়ি ঘাট পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসেন। সেখানকার নৌ-পুলিশ ডাকাতদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এত টাকা নিয়ে এতগুলো ব্যাবসায়ীর এভাবে নৌপথে রওনা দেয়া ঠিক হয়নি। তাদের জানালে তারা নিরাপত্তা দিয়ে নদী পারের ব্যাবস্থা করতেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ট্রলারের চালক দৌলতদিয়ার বাসিন্দা বাবুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যাবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আহতরা গোয়ালন্দ হাসপাতালসহ স্হানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।